বাকেরগঞ্জে হত্যা মামলায় অসীমকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা

0
978

বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে কালাম মৃধাকে হত্যার ঘটনায় ৭ জনকে আসামী করে নিহতের স্ত্রী পারভীন বেগম মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর খুনি ভন্ড রিয়াজ ফকির, স্ত্রী লাকী বেগম ও পুত্র অমিত ফকিরকে র‌্যাব-৮ সদস্যরা বরিশাল থেকে আটক করে বাকেরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে পটুয়াখালী সদর থানার খলিসাখালী গ্রামের মৃত তোজম্মার মৃধার পুত্র কালাম মৃধা খুন হয়। এলাকা সূত্রে জানা যায়, এই ফকির বাড়ি কালু শাহ্ দেওয়ানের তৃতীয় পুত্র মৃত রশিদ ফকিরের ছোট ছেলে অসীম ফকির।

তিনি পার্শ্ববর্তী মেসার্স এম,আর,বি ব্রিকস্ ইটভাটায় সহকারী ম্যানেজার হিসেবে চাকুরী করেন। ইটভাটাটি তার বাড়ির পাশেই বিধায় রাতদিন ২৪ ঘন্টাই ভাটায় থেকে দেখাশুনা করেন তিনি। পটুয়াখালীর খলিসাকাঠী গ্রাম থেকে আসা মানসিক রোগী কালাম মৃধার হত্যার সাথে অসীম ফকির জড়িত ছিলো না এবং সে কখনও ফকিরগীরিও করেননি।

এ ঘটনায় স্থানীয় একটি কুচক্রি মহল অসীম ফকিরকে পরিকল্পিতভাবে আসামী করে ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূতপ্রেত, শয়তান, জ্বীন ও মানসিক রোগীর চিকিৎসা করেন আমার চাচাতো ভাই ভন্ড রিয়াজ ফকির ও তার স্ত্রী লাকী বেগম।

ভন্ড রিয়াজ ফকির, তার স্ত্রী লাকী বেগম, বখাটে পুত্র অমিত ফকির, বোন শারমিন ফকিরসহ তার সাথে থাকা তাসেম খলিফার পুত্র পারভেজ খলিফা, নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের সুমন ও তার স্ত্রী মারিয়া বেগম। ঘটনার দিন ভন্ড রিয়াজ ফকির ও তার স্ত্রী লাকী বেগমের আদেশক্রমে অমিত, পারভেজ ও সুমন মানসিক রোগী কালাম মৃধার হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক চেপে ধরে হাড়কাঁপানো শীতে বাড়ির পুকুরের ঠান্ডা পানিতে ফেলে দেয়। তখন মানসিক রোগীর সাথে থাকা তার স্ত্রীসহ তার দুই ছেলে চিৎকার করে বলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলবে কে আছো বাঁচাও।

এই চিৎকার শুনে ভন্ড রিয়াজ, স্ত্রী ও বোন পারভীন বেগমের গলায় বটি ধরে জোর করে একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখে। পরে কালাম মৃধাকে তীব্র শীতে পুকুরে চুবিয়ে বলতে বলে কালু শাহ্ দেওয়ানের কথা ক। একপর্যায় কালাম মৃধার রক্ত জমাট বেঁধে মারা গেলে তারা লাশটি পার্শ্ববর্তী বাগানে ফেলে চলে যায়।

এ বিষয়ে অসীম ফকির জানান, ভাটায় বসে লোকমুখে শুনতে পাই আমাদের বাড়ির উত্তর পাশের বাগানে একটি লাশ পড়ে আছে। পরে আমি সেখানে গিয়ে দেখি লাশের চারপাশে গ্রামের অনেকই ভীড় করে আছে। স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে লাশ নিয়ে যায়।

নিহত কালামের স্ত্রীর পারভীন বেগম জানান, আমাকে একটি কক্ষে বন্ধি করে রেখে আমার স্বামীকে চুবিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে ভন্ড রিয়াজ। হত্যার পরে আমার চিৎকার শুনে রিয়াজ ফকির আমার কাছে এসে পুলিশের ভয় দেখিয়ে চেচামেচি করতে বারন করে এবং পুলিশের কাছে হত্যা কান্ডের ঘটনা মিথ্যা বলতে শিখিয়ে দেয়। রিয়াজের স্ত্রী ও বোন রাত ৩ টার সময় পারভিন বেগমের গলায় বটি ধরে অন্যত্র সড়িয়ে দেয়।

এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক মশিউর রহমান জোমাদ্দার জানান, অসীম ফকির কোন সময় ফকিরী করেননি। রিয়াজ বাড়িতে বসে এসব অপকর্ম করলে অসীম ফকির নিষেধ করে। ঘটনার দিন সে আমার ইটভাটায় ছিলো। দুর্ঘটনার কথা শুনে সকালে তার বাড়িতে দেখতে যায়। এ বিষয়ে রঙ্গশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন শিকদার জানান, অসীম ফকির এসব কাজের সাথে জড়িত ছিলো না।

স্থানীয় কিছু ভন্ডরা অসীমের কাছ থেকে টাকা খাওয়ার জন্য এ ষড়যন্ত্র করে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ বলেন, হত্যার বিষয়ে মামলা হয়েছে। চিকিৎসার নামে ভন্ড ফকিরদের এটি একটি ব্যবসা। তাদের চিকিৎসায় মানুষ ভাল হয় না এরা সবাই প্রতারক, সরল মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে।

তেল-পানিপড়া, ঝাড়ফুঁক, গলায় মালা পরানো এসব কোন কিছুতেই রোগ ভাল হয় না। তবে, এসব কুচিৎিসায় অসুস্থ লোক ভাল না হলেও সুস্থ লোক অসুস্থ হয়ে যায়। এ বিষয়গুলো যদি এই জামানায় এসেও সাধারণ মানুষ না বোঝে তাহলে আর কিইবা করার আছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে রিপোর্ট আসলে বলা যাবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে।

এখন পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামীসহ ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি এঘটনার সাথে কারও সংশ্লিষ্টতা থাকে তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করা হবে। এলাকাবাসী নজানান, রিয়াজ ফকির ও তার সহযোগিরা গাউছে আজম হযরত কালু শাহ দেওয়ানের মাজার শরীফের ব্যানারের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছিলো।

অসীম ফকির কখনই এদের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো না এবং অসীম সব সময় ভন্ড রিয়াজ ফকিরের অপচিকিৎসার বিরোধীতা করছে। অথচ স্থানীয় ভন্ডরা অসীমকে আসামী করে টাকা খাওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে। 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + 19 =