কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ ! পৌষের আগুনে ফারজানাদের সব শেষ হয়ে গেলেও সুবিধা ভোগীদের তো আগুনের তাঁ নিতে অসুবিধে নেই।আর সেই সুবিধা ভোগীরা যখন পুলিশ- তখন যৌতুক ভাইরাসে ফারজানারা মরছে, ফারজানারা মরবে! বিচার যাই হোক । নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বৃদ্ধ দিন মজুর গোলাম মোস্তফার দ্বিতীয় কন্যা মোছাঃ ফারজানা বেগমের বিয়ে হয় গত ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে একই ওয়ার্ডের আব্দুস ছবুর আলী ছেলে মোঃ মাজেদুল ইসলামের সাথে। ফারজানার বৃদ্ধ দিন মজুর বাবা শত কষ্টেও যৌতুক হিসেবে নগদ এক লক্ষ টাকা ও কিছু স্বর্ণলাংকার দিলেও মন ভরেনি মাজেদুলের পরিবারের কারোরই। তাই মাঝে মধ্যে শুধু মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে ক্ষ্যান্ত নয়, গার্মেন্টস কর্মী মাজেদুলকে বউ নিয়ে ঢাকা যেতেও দেয়নি পরিবারের সদস্যরা । এভাবে চলে তাদের সংসার। বিয়ের প্রায় দেড় বছরেই ফুটফুটে কন্যা সন্তান মিথিলার জন্ম দেয় মাজেদুল-ফারজানা জুটি । কথা ছিলো মিথিলার বয়স ৬ মাস পার হলে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ঢাকায় পারি জমাবে মাজেদুল। যেমন কথা তেমন কাজ।
২রা জুন ২০১৭ খ্রিঃ স্ত্রী ও কন্যাকে ঢাকায় নিতে গ্রামের বাড়িতে হাজির মাজেদুল। কিšুÍ যৌতুক ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই মিললো না ৭ মাস বয়সী মিথিলার মা ফারজানার। মাজেদুলের মা-বাবা , ছোট বোন ও চাচা-চাচীদের প্রবল বাধার মুখে স্ত্রী ও কন্যাকে ঢাকায় নেওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। কারণ যৌতুক । মন ভেঙ্গে যায় ফারজানার । বরাবরের মতো ঝগড়া বিবাদ এক পর্যায়ে নির্যাতন এবং স্থানীয়দের ও ফারজানার বাবার বাড়ির লোকদের নিয়ে বিচার সালিশ ইত্যাদি।
তবুও যৌতুক ভাইরাস ফারজানার দিক থেকে মুখ ফেরালোই না। সালিশী দিবাগত রাতেই প্রবল নির্যাতনে আপন স্বামী , শাশুরী, শশুর , ননদ ও স্বামীর চাচা-চাচীদের হাতেই ঢাকার পরিবর্তে মিথিলাকে রেখে ফারজানা একাই পারি জমালো না ফেরার দেশে । অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা যায় গভীর রাতে মাজেদুলের পরিবার ফারজানার মৃত দেহ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। কখনো লাশ গুম করার জন্য ঘরের পিছনে গর্ত খোরা, আবার কখনো অন্য কিছু।
শেষ মেষ কুল কিনারা না পেয়ে মাজেদুলের ছোট বোন নুপুরের ঘরে টেবিলের উপর চেয়ারে ফারজানার লাশকে অর্ধ বসা অবস্থায় গলায় ওরনা পেছিয়ে ফাঁস দিয়ে রাখে। খবর পেয়ে সকাল বেলায় ফারজানার বাবা গোলাম মোস্তফা গ্রাম পুলিশ ও অন্যান্য লোকদের নিয়ে যেখানে গিয়ে দেখে লাশের ঘরের দরজা বাহির থেকে লাগানো। দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে সবাই দেখতে পায় যে, ফারজানার হাতে, পায়ে ও শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন এবং শরীরে ধুলা মাটি লাগানো ।
কিন্ত দুর্ভাগ্য বাঙ্গালী জাতির , দুর্ভাগ্য ফারজানার যে, নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের অলৌকিক ময়না তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে কিশোরগঞ্জ থানা (নীলফামারী) এটাকে আত্ম হত্যা বা অপমৃত্যু হিসেবে মামলায় উপস্থাপন করল। যার ফলশ্রুতিতে এটা হয়ে গেল অতি সাধারণ একটি মামলা । নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্র বলে, আমাদের পুলিশরা যদি ভারতীয় চ্যানেলের ক্রাইম পেট্রোল দেখতো তাও অন্তত এই ক্লু গুলো পেতো যে, ফারজানার শরীরে আঘাত কেন? শরীরে ও হাতে-পায়ে ধুলা মাটি কেন ? আত্মহত্যা হলে ঘরের দরজা বাহিরে থেকে লাগানো কেন? চেয়ারে অর্ধ বসা কেন? ইত্যাদি।
পরবর্তীতে ফারজানার বাবা গোলাম মোস্তফা নীলফামারী কোর্টে মামলা করলে আবারো মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ঐ কিশোরগঞ্জ থানা। এবার মাত্র দুজনকে অভিযুক্ত করে দঃবিঃ ৩০৬ ধারা রেখে বাকি সব বাদ দিয়ে জাতিকে আরো একটি দৃষ্টান্ত দেখা থেকে বঞ্চিত করলো পুলিশ। স্থানীয়রা অপরাধ বিচিত্রাকে বলে , পুলিশ সঠিক তথ্য না দিয়ে এরকম করলে আদালত ন্যায় বিচার করবে কিভাবে? কী হবে যৌতুক ভাইরাসে হত্যার শিকার ফারজানাদের তা কি কেউ জানে? পুলিশ এবং স্থানীয় কিছু আর্থিক সুবিধা-ভোগী দালাদের যোগ সাজশে প্রকৃত তথ্য যখন আদালতকে দেওয়াই হচ্ছে না, তখন বিচার ??? (ফলোআপ চলবে)।