সমস্যা হতে পারে জেনেও খালি পায়েই গিয়েছিলেন মেঘনাদ

0
785

এভাবেও প্রতিবাদ করা সম্ভব। সবসময় যে জীবন বাজি রেখে রক্ত ক্ষয় করেই ব্রিটিশ রাজ শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে তার কোনও মানে নেই তার প্রমাণ মেঘনাদ সাহা। জুতা না পরলে তার বৃত্তি বাতিল হতে পারে জেনেও খালি পায়েই গিয়েছিলেন স্কুলে।১২ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন মেঘনাদ। কলেজিয়েট স্কুলের হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হল।

মাসিক চার টাকা সরকারি বৃত্তি ছাড়াও পূর্ব-বঙ্গ বৈশ্য সমিতি থেকে পাওয়া গেল মাসিক দু’টাকা বৃত্তি। মাত্র ছয় টাকা দিয়ে সারা মাসের থাকা-খাওয়া আর লেখাপড়ার খরচ কীভাবে চালাবে মেঘনাদ? ভেবে অস্থির হয়ে গেলেন মেঘনাদের দাদা জয়নাথ। নিজে জুটমিলে কাজ করে বেতন পান মাত্র বিশ টাকা। সেখান থেকেই মাসে পাঁচ টাকা করে ভাইয়ের জন্য পাঠাতে শুরু করলেন জয়নাথ। মাসিক ১১ টাকায় ভালোভাবেই চলে যাচ্ছিল মেঘনাদের। কিন্তু হঠাৎ করে একটা বড় রকমের সমস্যায় পড়ে যান মেঘনাদ।

ঘটনা ১৯০৫ সালের। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিরুদ্ধে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলায়। আন্দোলন রুখতে পর্যুদস্ত ইংরেজ সরকার। এমনিতে পয়সার অভাব তাই খালি পায়েই স্কুলে যেত স্কুল পড়ুয়া মেঘনাদ সাহা। কিন্তু সেদিন স্কুলে যেতেই অন্যরকম ঘটনা ঘটল। তাকে আলাদা করে লাইনে দাঁড় করানো হল। অপরাধ? খালি পা। আসলে সেদিন বাংলার গভর্নর ফুলারের আগমণ উপলক্ষে ঢাকায় ছাত্ররা প্রতিবাদ-মিছিল বের করেছিল। পায়ে জুতো না-পরাটাও ছিল প্রতিবাদের অংশ। নিজের সমস্যা হতে পারে জেনেও খালি পায়েই গিয়েছিলেন মেঘনাদ। শাস্তিও হয়েছিল। স্কুল থেকে বহিষ্কার করে বাতিল করা হয়েছিল। অথচ ওই বৃত্তিই তার সম্বল ছিল। সব কিছু ভুলে এভাবেই দেশের হয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। মেধা যার প্রাণ, তার থেকে মেধা প্রমাণের মাধ্যম কেড়ে নেওয়া এর অর্থ জীবন দিয়ে লড়াইয়ের চেয়ে কম কিছু নয় তা বলা যেতেই পারে।

সমগ্র বিজ্ঞানের জগতে আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর – অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাদের অন্যতম। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়োনাইজেসন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলী ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়।

১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ (আয়নাইজেশান ইকুয়েশান) প্রকাশিত হবার পর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে যত গবেষণা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোই এই সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আর্নল্ড সামারফেল্ড, নীল্‌স বোর, ম্যাক্স বর্ন, আলবার্ট আইনস্টাইন, আর্থার এডিংটন, এনরিকো ফার্মি, আর্থার কম্পটন প্রমুখ দিকপাল মুগ্ধতার সাথে স্বীকার করেছেন মেঘনাদ সাহার অনন্য প্রতিভার কথা।

গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ পাবার পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন চার বার। দেশে নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান পড়ানো শুরু হয়েছে মেঘনাদ সাহার হাতে। নিরলস চেষ্টা ও পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ এসোসিয়েশান – সবগুলো সংগঠনই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 + five =