ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান একই মঞ্চে বক্তৃতা করেন সেদিন

0
1258

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দিনটি ছিল সোমবার। ব্রিটিশ সরকারের বিমানে করে সকাল আটটা নাগাদ দিল্লির বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।এর ঠিক দুদিন আগেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন পৌঁছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দিল্লি বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এরপর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জাতির পিতাকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়। দিল্লির রাস্তায় তাদের গাড়ি বহরের ওপর পুষ্পবর্ষণ করা হয়েছিল।

তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তরুণ কর্মকর্তা ছিলেন দেব মুখার্জি, যিনি পরবর্তীতে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সেদিনের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে দেব মুখ্যার্জি বলেন, এর আগে কয়েক সপ্তাহ শেখ মুজিবকে নিয়ে অনেকে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ পাকিস্তানের কারাগারে তিনি বেঁচে আছেন কিনা – সেটি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল অনেকের মনে।

দেব মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু উষ্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান একই মঞ্চে বক্তৃতা করেন সেদিন।

সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আপনাদের সরকার, আপনাদের সৈন্য বাহিনী, আপনাদের জনগণ যে সাহায্য এবং সহানুভূতি আমার দুঃখী মানুষকে দেখিয়েছে, চিরদিন বাংলার মানুষ তা ভুলতে পারবে না।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের জন্য ইন্দিরা গান্ধী কূটনীতিকভাবে যে ভূমিকা রেখেছিলেন সে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু।

‘দুদিন আগেও আমি পশ্চিম পাকিস্তানের অন্ধকার সেলের মধ্যে বন্দি ছিলাম। শ্রীমতি গান্ধী আমার জন্য দুনিয়ার এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তিনি চেষ্টা করেন নাই আমাকে রক্ষা করার জন্য। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে কৃতজ্ঞ,’ দিল্লির ভাষণে বলেছিলেন শেখ মুজিব।

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সেটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাক্ষাৎ। যদিও এর আগের দিন লন্ডনে থাকা অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের এই মহান স্থপতি।

দেব মুখার্জি বলেন, “তার আগে তো শেখ মুজিব সম্পূর্ণ পাকিস্তানের প্রাদেশিক নেতা ছিলেন। তারপরে তিনি জাতীয় নেতা হয়ে উঠেন। তারপরে তো মিলিটারি ক্র্যাক ডাউন শুরু হয়। কাজেই ওনার সাথে তো পূর্বে দেখা হওয়ার কোন সুযোগ হয়নি।”

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বঙ্গবন্ধুর সেই প্রথম সাক্ষাতের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করেছিল বলে মনে করেন দেব মুর্খাজি।

তাঁর মতে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে বহু বছরের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক বিঘ্নিত হয়। দিল্লিতে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর শেখ মুজিবকে বহনকারী বিমানটি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে নামে।

তাকে স্বাগত জানানোর জন্য সকাল থেকে দলে দলে মানুষ ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন ।

বিমানবন্দর থেকে তিনি যান তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে, যেটি বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর প্রথম ভাষণ সেখানেই হয়। বিমানবন্দর আর রেসকোর্সের আশেপাশে ছিল মানুষের ঢল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 8 =