ওসি এমারত আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে

0
595

চাঁদা না দেওয়ায় ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দুই দোকানিকে ফাঁড়িতে আটকে রেখে মারধরসহ মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাভারের ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এমারত হোসেনের বিরুদ্ধে।অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় মারধরের শিকার পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী সবজি ব্যবসায়ী ইউনুস আলীকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা

দেওয়া হলেও মামলা-হামলা এবং পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অপর ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম।

মারধরের শিকার বৃদ্ধ ইউনুস আলী (৫৫) বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। এক সময় ভিক্ষা করে সংসার চালাতাম। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়ে ভিক্ষা ছেড়ে সবজি ব্যবসা শুরু করি। প্রতিদিন অল্প কিছু কাঁচা সবজি কিনে পুলিশকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে ফুটপাতে বসে ব্যবসা শুরু করি। জানুয়ারি মাসে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি ও বই কিনতে অনেক টাকা খরচ হওয়ায় পুলিশকে চাঁদা দিতে পারি নাই। এই জন্য ওসি এমারত আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। আমি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরলেও ফিরে পাইনি ব্যবসার স্থান। আমার জায়গা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে অন্য একজনকে বুঝিয়ে দিয়েছে ওসি এমারত হোসেন।

অপর ভুক্তভোগী দ্বীন ইসলাম (৪২) অভিযোগ করেন, হেমায়েতপুর এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পক্ষে চাঁদা আদায় করেন ছয় থেকে সাতজন ব্যক্তি। প্রায় সাত মাস আগে ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ফুটপাত থেকে পুলিশের পক্ষে চাঁদা আদায়ে বাধ্য করেন। এরপর থেকে বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে দিনে ৫০০ টাকা করে প্রায় দশ হাজার টাকা আদায় করতাম। কিন্তু টাকা আদায় করতে দেরি হলে পুলিশ কর্মকর্তা গালাগালিসহ মারধর করতেন। এ জন্য চাঁদা আদায়ে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওসি এমারত হোসেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে ফাঁড়িয়ে আটকে রেখে মারধর করেন এবং চাঁদা আদায় না করলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। বর্তমানে উপায় না পেয়ে আমি পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

ভুক্তভোগী দ্বীন ইসলামের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার বলেন, চাঁদা তুলতে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামীকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন সেখানকার কর্মকর্তা এমারত হোসেন। সারা দিন মারধর করে সন্ধ্যার পর পুনরায় চাঁদা তুলে দেওয়ার শর্তে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের দুই পাশের ফুটপাতে ছোট-বড় প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী দোকান রয়েছে। এদের মধ্যে ফল, চটপটি, সবজি ও বিভিন্ন পণ্যের ভাসমান দোকান থেকে প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে বসা এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে একজনকে চাঁদা আদায়ে ওসি এমারত বাধ্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিদিন আদায় করা টাকার হিসাব সন্ধ্যার পর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ওসি এমারতের কাছে বুঝিয়ে দেন উত্তোলনকারীরা।

চাঁদা তোলা দ্বীন ইসলাম ও প্রতিবন্ধী ইউনুস আলীকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে হেমায়েতপুর হরিণধরা ট্যানারি ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) এমারত হোসেন বলেন, এসব ব্যাপারে ফোনে কি কথা বলব? আপনি ফাঁড়িতে আসেন সাক্ষাতে কথা বলব।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরর্দার বলেন, এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × one =