জনসাধারণের সঞ্চয়ের সকল পথ একে একে রুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছিল নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য। গত কয়েক দশক যাবত এই খাত বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করেছিল। কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের এসব সঞ্চয়ের সকল ক্ষেত্র ক্রমশ: সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এক সময় এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে শুধু ফরম পূরণ করে টাকা জমা দিলেই বিনিয়োগ হয়ে যেত। সরকার গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিনিয়োগ করার আহবান জানাতো। সাম্প্রতিক বছর দুয়েকের মধ্যে এই খাতে বিনিয়োগে যে নিয়মের কড়াকড়ি করা হচ্ছে তাতে মধ্যবিত্তরা এই খাতে আর বিনিয়োগ করতে পারছে না। সঞ্চয়পত্রে একবার মুনাফার হার কমিয়ে দেওয়া হলো। পাঁচ লাখ টাকার ওপর বিনিয়োগ করলে মুনাফার ওপর শতকরা ১০% হারে কর কর্তনের নিয়ম চালু করা হলো। এরপর বিনিয়োগ করতে টিন নম্বর ও ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক করা হয়। বিনিয়োগ ও মুনাফা তোলার জন্য ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতে হবে।
আগে নিয়ম ছিল মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারী ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্রে পূন:বিনিয়োগ করতে পারতো। বর্তমানে মেয়াদ শেষে ডাকঘর বা সঞ্চয় অফিস থেকে পুরো টাকা বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সেই টাকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে ব্যাংকে যেয়ে জমা করে নতুন করে বিনিয়োগ করতে বাহারি নিয়মের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এই খাতে কর্মরত খোদ কর্মকর্তাগণ বলছেন একজন গরিব লোক যিনি ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে চান তিনি ব্যাংক হিসাব খুললে ব্যাংক তার হিসাব থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর বিভিন্ন চার্জ কেটে রাখবে এবং তাতে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাবে। এতসব বাধা বিপত্তির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আশংকাজনক হারে কমে এসেছে।
এই খতে বিনিয়োগ করতে নাকানি চুবানি খাওয়ার কারণে মধ্যবিত্তরা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে এবং মেয়াদি আমানত ও সাধারণ হিসাব খুলতে শুরু করে। কিন্তু সেখানেও কুঠারাঘাত করা হয়। জনসাধারণ ও মধ্যবিত্তরা নিরাপদ বিনিয়োগ করার জন্য হাপাতে হাপাতে যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই কোপ মারা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ডাকঘর মেয়াদি ও সাধারন হিসাবের ওপর মুনাফার হার হঠাৎ করে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।
মধ্যবিত্ত ও বিনিয়োগকারীরা আর যাবে কোথায়। যারা বয়স্ক, ব্যবসা বাণিজ্য করার মতো অভিজ্ঞতা ও শারীরিক অবস্থা নেই তাদের নিরাপদ বিনিয়োগের ওপর নির্মম কোপ মারা হয়েছে। হায়রে অসহায় জনগণ! যাবি কোথায়!! এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সরকারের ঋনের পরিমান সীমা অতিক্রম করছে। এই অবস্থায় সঞ্চয়ের খাতগুলোতে একের পর এক কোপ মারা আর্থিক খাতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আলামত।