হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। যা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দূর্ণীতির নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেবা নিতে এসে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে চরম হয়রাণির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ভোক্তভূগীদের অভিযোগ, খোদ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে দালাল চক্রটি। ওই অফিসে তাদের কর্তৃত্ব এতটাই যে দালালদের মাধ্যম ছাড়া কোন কাগজপত্রই দেয়া হয় না এ যেন দালালদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ অফিসে সিসি টিভি স্থাপনের ফলে মাঝে কিছুদিনের জন্য কমে যায় দালালদের যাতায়ত। তবে সম্প্রতি রহস্যজনক ভাবে সিসি টিভিটি অকেজো হয়ে পড়ে। আর এতে করে ফের বাড়তে থাকে দালালদের উৎপাত।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দালালীর অভিযোগে শহরের ক্যাফে তাজ হোটেলের সামন থেকে বাহুবলের যুবক জাকির মিয়া ওরফে জাকারিয়া নামে এক যুবকে আটক করে জেলা প্রশাসন। পরে তাকে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে, হবিগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের। যোগদানের পরপরই তিনি বেশ কয়েকটি ঝটিকা অভিযান চালান বিআরটিএ অফিসে। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। এর মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর দালাল চক্রের দুই হোতাকে আটক করে ১০ দিন করে কারাদন্ড দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটর সাইকেলসহ হালকা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নারের জন্য প্রথমে ব্যাংকে জমা দিতে হয় ৫শত ৩৮ টাকা। পরে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আরো ২৩শত টাকা জমা দিতে হয়। সবমিলিয়ে জমা হয় প্রায় ২৮শত ৩৮ টাকা। কিন্তু হালকা যানবাহানের এ লাইসেন্সটি পেতে একজন গ্রাহককে গুণতে হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। যার অতিরিক্ত টাকা যায় দালালদের পকেটে। এছাড়াও প্রতিটি সিএনজি’র লাইসেন্স, রোড পারমিট ও গাড়ির নাম্বার প্লেটের জন্য সরকারি নির্দেশনা মতে জমা দিতে হয় প্রায় সাড়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে গুণতে হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর এতে করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে দালাল ও অসাধু চক্র।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, দালাল নির্মূল করতে বিআরটিএ অফিস যাথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। এছাড়াও বিআরটিএ অফিসের সিসি টিভি সচল রয়েছে। বিআরটিএ অফিসের কেউ দালালির সাথে জড়িত নয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, শুধু বিআরটিএ অফিসই নয় যে কোন অফিস থেকে দালাল নির্মূল করতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে দালালদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে, সাথে অপরাধ বিচিত্রা অনুসন্ধান ও থাকবে।