বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ ম‍ৃত্যু ঝুকিতে

5
2180

সরকার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ না নিলে, কভিড-১৯ সংক্রমন থেকে বাংলাদেশে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও এপিডেমিওলজিস্টদের লেখা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকদের দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, “যদি এই রোগ প্রশমন বা অবদমনের [মিটিগেশন বা সাপ্রেশন] জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে ৮ মে পর্যন্ত নতুন রোগীরা আক্রান্ত হতে থাকবে। […] [২৮ মে নাগাদ] মোট ৮ কোটি ৯১ লাখ মানুষের মধ্যে এই সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যেতে পারে। ৩০ লাখ ৩৭ হাজার রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। ৬ লাখ ৯৬ হাজার রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা করতে হতে পারে। মারা যেতে পারে ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৪২ জন মানুষ।”

প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে মোট ১৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ অর্থাৎ জনসংখ্যার ৮১% মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ নিলে এই রোগ প্রশমন বা অবদমন করা যাবে অথবা পদক্ষেপ নিলে মৃতের সংখ্যা ও আক্রান্তের সংখ্যা ঠিক কতটা কমতে পারে তা গবেষকরা ব্যাখ্যা করেননি।

বাংলাদেশ কতটা গুরুতর অবস্থার সম্মুখীন এবং কীভাবে পরিস্থিতি খুব দ্রুতই খারাপের দিকে চলে যেতে পারে, তা এই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ মার্চ, ৪৬৪০ জন লক্ষণসহ রোগী পাওয়া যাবে। ৫৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ১২ রোগীর নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হবে। মারা যাবে ১ জন।

সর্বোচ্চ সংখ্যক লক্ষণ সমেত রোগী দেখা যেতে পারে মে মাসের ১১ তারিখ (১ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি)। ১৬ মে, ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৮ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। ১৪ মে, ১ লাখ ১০ হাজার ৯১৩ জন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করতে হতে পারে। ২৬ মে একদিনেই মোট ৮০ হাজার ৭৯৬ জন মারা যেতে পারেন।”

১২ রোগীর নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হবে। মারা যাবে ১ জন। সর্বোচ্চ সংখ্যক লক্ষণ সমেত রোগী দেখা যেতে পারে মে মাসের ১১ তারিখ (১ কোটি ৪১ লাখেরও বেশি)। ১৬ মে, ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৮ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। ১৪ মে, ১ লাখ ১০ হাজার ৯১৩ জন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করতে হতে পারে। ২৬ মে একদিনেই মোট ৮০ হাজার ৭৯৬ জন মারা যেতে পারেন।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, যেই মডেল ব্যবহার করে এই গবেষণা করা হয়েছে, সেটি অনুযায়ী, ১৮ মার্চ যখন বাংলাদেশে প্রথম এই রোগে একজনের মৃত্যু হয়, ততদিনে সারাদেশে ১,৬৮৫ জনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ ছিল। আজ থেকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৩১ মার্চ নাগাদ, লক্ষণ দেখা যেতে পারে ২১ হাজার ৪৬১ জনের মধ্যে। ২৭৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। ১৩ জনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হতে পারে। মারা যেতে পারে ৬ জন।

গবেষকরা আরও সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, তাদের হিসাবে হয়তো পরিস্থিতির ভয়াবহতা বাস্তবের চেয়েও কম মাত্রায় ফুটে উঠেছে। তারা যেহেতু বাংলাদেশে প্রথম রোগী পাওয়ার তারিখ অনুমান করে ধরে নিয়েছেন, “সেহেতু ১৮ মার্চ এক জন রোগী মারা যাওয়ার কথা বলা হলেও, বাস্তবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকতে পারে।

” এছাড়া প্রতিবেদনে জনসংখ্যার বয়স কাঠামো ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জনমিতির উপাত্তের ভিত্তিতে। ২০১১ সালের চেয়ে বর্তমানে বয়স্ক লোকের হার আরও বেশি বলে মনে করছেন গবেষকরা। তাই মৃত্যুর হার বাস্তবে আরও বেশি হতে পারে।

এই প্রতিবেদনটি যৌথভাবে লিখেছেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ গবেষক: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের মলয় কে মৃধা ও রিনা রানি পাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের দীপক কে মিত্র, যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যালাইন ল্যাবরিক ও ইফ্যান ঝু।

মূলত লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকদের উদ্ভাবিত একটি মডেলের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। সংক্রামক রোগের বিষয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকদের খুবই উচ্চমাপের ধরা হয়।

প্রখ্যাত এপিডেমিওলোজিস্ট নিল ফার্গুসনের নেতৃত্বে প্রস্তুতকৃত ওই মডেল অনুযায়ী যুক্তরাজ্যেও প্রায় ৫ লাখ ও যুক্তরাষ্ট্রে ২২ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে মারা যেতে পারে। তাদের মডেল ও প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের কভিড-১৯ মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপে বড় ধরণের পরিবর্তন আসে।

এই মডেলে মূলত তিনটি বিষয়কে আমলে নেওয়া হয়েছে: বিভিন্ন বয়সী মানুষের মধ্যে লক্ষণ দেখা যাওয়ার হার, তাদের মধ্যে যাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হবে, হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে যাদের নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হবে, এবং সামগ্রিক মৃত্যুর হার। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিও এই মডেলে কল্পনা করা হয়েছে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক মলয় কে মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হোননি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × one =