নেই সামাজিক দূরত্বও ঈদ কেনাকাটা

0
814

মানুষের সঙ্গে রাস্তায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবহন * নিয়ম না মানলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ- হেলাল উদ্দিন রাজধানীতে ঈদ কেনাকাটার জন্য গত দু’দিনে সীমিত আকারে মার্কেট ও দোকানপাট খুলেছে। দোকানগুলোতে মেয়েদের থ্রি-পিস, টু-পিস ও শাড়ি, ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, পাঞ্জাবি ও ছোটদের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। যদিও আশানুরূপ ছিল না অধিকাংশ মার্কেটে ক্রেতার উপস্থিতি। তবে যেসব স্থানে ভিড় ছিল, সেখানে স্বাস্থ্যবিধিসহ অনেক স্থানে উপেক্ষিত ছিল সামাজিক দূরত্ব। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সোমবার এক ভিডিও বার্তায় এ নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা আসতে থাকায় সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের রাস্তায় গণপরিবহন বাদে ভাড়ায় চলিত রিকশা, সিএনজি থেকে শুরু করে নিজস্ব গাড়ির ভিড় লক্ষ করা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত রোববার সরকারের সব নির্দেশ মেনে ঈদ কেনাকাটায় দোকান খোলা হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে এখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা। কিন্তু করোনা আতঙ্কে চোখে পড়ার মতো ক্রেতার উপস্থিতি ছিল না অধিকাংশ দোকানপাটে। আবার অনেক মার্কেট ছিল বন্ধ। আর যে কয়েকটি মার্কেট ও দোকান খোলা হয়েছে সেখানে তেমন বেচাকেনা নেই।

দু-একজন করে ক্রেতা আসছেন। তবে বিক্রি না হলে বা শোরুমে দিনের খরচ না উঠলে বন্ধ রাখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। তবে দিন যত যেতে থাকবে আশা করছেন ক্রেতা আসবে, বিক্রিও বড়বে- এমনটিও মনে করছেন কোনো কোনো বিক্রেতা।

এদিকে করোনা মোকাবেলা ও সংক্রমণ রোধে রমজান মাসে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ আছে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়ার সব পাইকারি মার্কেট, নিউমার্কেট, মৌচাক ও আনারকলি মার্কেট।

সোমবার সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ ভিড় ছিল। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম খোলায় বেলা ১১টা থেকে ক্রেতার আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। এদিন দুপুরের পর সেখানে ক্রেতার চাপ বাড়তে থাকে। ওই সময় বিভিন্ন মার্কেট বা শোরুমে উপস্থিত ক্রেতারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেননি। এছাড়া কয়েকটি শোরুমে ক্রেতাদের প্রবেশের সময় জীবাণুনাশক দেয়া হলেও বেশির ভাগ শোরুম বা দোকানে ক্রেতাদের জীবাণুনাশক দেয়া হয়নি।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ম্যান্স লুবের ম্যানেজার কামরুল হাসান বলেন, ঈদ পোশাক বেচাকেনার জন্য আমরা প্রস্তুত। সকালে শোরুম খোলার পর এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। তবে ক্রেতা এসেছে। পোশাক দেখে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু পারছি ক্রেতা ও আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি।

শোরুমের সামনেই জীবণুনাশক পানি দিয়ে ভেজানো চটের বস্তা রাখা হয়েছে। ক্রেতারা এলেই জুতার তলা জীবাণুমুক্ত হয়ে শোরুমে প্রবেশ করছে। পরে শোরুমে প্রবেশ করলে আমরা হ্যান্ডসেনিটাইজার হাতে স্প্রে করে দিচ্ছি।

এছাড়া পোশাক দেখানোর সময় যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, এই দু’দিনে কোনো বিক্রি নেই। দোকানের ভাড়া ও কর্মীদের খরচ না উঠলে শোরুম বন্ধ করে দেয়া ছাড়া গতি থাকবে না। তবে আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে ক্রেতা আসবে। তখন বিক্রিও বাড়বে।

একই শোরুমে পোশাক কিনতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জামিল বলেন, ঈদের জন্য অল্প কিছু কেনাকাটা করতে এসেছি। এতদিন ঘর থেকে বাইরে বের হইনি। তিনি বলেন, ঈদে যে পোশাক কিনি, তা দিয়ে পুরো বছর কাটাতে হয়। বর্তমানে আমার যে পোশাক আছে তার মান বেশি একটা ভালো না। যে কারণে কিনতে আসা।

একই স্থানে নিউ জেন্স লেদার গ্যালারির শোরুমে কোনো ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এ বিষয়ে বিক্রেতা বলেন, পেট চলে না, এ সব দিয়ে কী করব। তবে তিনি জানান, সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে। একই চিত্র দেখা গেছে সেখানকার সানিয়া সুজের শোরুমে।

অন্যদিকে রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে সাদিয়া ফ্যাশনে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতেও দু-একজন ক্রেতা আসছেন। পোশাক দেখছেন। কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে তেমন সংখ্যক ক্রেতা আসা শুরু করেননি। তাই তেমনভাবে বিক্রি জমে ওঠেনি।

ওই এলাকায় আড়ংয়ের শোরুমে গত রোববার থেকে ঈদ পোশাক বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। পোশাক কেনার জন্য ক্রেতাদের শোরুমের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ক্রেতার খুব ভিড় হোক সেটা আমরা চাই না।

এ জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন। এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো ক্রেতা ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এক দল ক্রেতা বের হলে, আরেক দল ক্রেতা ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে।

তিনি জানান, কেনাকাটার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ক্রেতাদের যে ধরনের সাড়া চেয়েছিলাম, সেটা পাচ্ছি। এ জন্য আমরা সন্তুষ্ট। এছাড়া ক্রেতা ও কর্মীদের সুরক্ষায় আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এদিকে সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দোকান কিংবা প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দিতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই সীমিত আকারে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ করা গেছে যেসব ক্রেতা শপিং করতে এসেছেন তারা মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই কেনাকাটা করছেন। মার্কেটগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা সামাজিক গুরুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি।

হেলাল উদ্দিন বলেন, তার পরও যদি কেউ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমিতি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব- তাৎক্ষণিক দোকান কিংবা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেবেন। যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে পুলিশের সহায়তা নেবেন। তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছি। তাই কোনো মতেই বেখেয়াল হলে চলবে না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + ten =