করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনের পুলিশের মানবিকতা

0
487

লকডাউনের কারণে বন্ধ গণপরিবহন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে বহিরাগতদের এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি। তাই তাঁবুর ভিতরেই আটকে আছে তাদের জীবন। কিন্তু জীবিকা না থাকলে জীবন যে চলে না। আর জীবন চালানোর জন্য জীবিকার সন্ধানে বের হওয়ারও নেই কোনো সুযোগ। এমন কঠিন অবস্থায় পরিবার নিয়ে উপোস করছিল সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের বেদেপল্লীর লোকজন। সে খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যায় জেলা পুলিশের একটি দল। পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন নিজে তুলে দেন খাদ্য উপহার। শুধু জৈন্তাপুরের বেদেপল্লীই নয়, সিলেটের সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ। একইভাবে করোনার সংকটময় সময়ে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশও। খাদ্য উপহার আর আর্থিক অনুদান দিয়ে তারা পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষের। একই সঙ্গে লকডাউন কার্যকর রাখা, সচেতনতা বৃদ্ধি, অপরাধ দমন এবং সামাজিক সহিংসতা বন্ধেও কাজ করে যাচ্ছে জেলা ও মহানগর পুলিশ।

করোনাকালে পুলিশের এই মানবিকতা এখন প্রশংসা কুড়াচ্ছে সিলেটজুড়ে। সহযোগিতা আর মানবিকতার এ মানসিকতা ধরে রাখা গেলে ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই স্লোগান বাস্তবে রূপ নেবে এমনটা মনে করছে সচেতন মহল। লকডাউনের কারণে ঘরবন্দী থাকায় মানুষের মধ্যে বাড়ছে মানসিক চাপ।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন খারাবি আর নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে পুলিশের কর্মব্যস্ততাও। সঙ্গে রয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিশেষ দায়িত্ব। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচাররোধেও চোখ রাখতে হচ্ছে পুলিশকে। এর বাইরে মানুষের জান-মাল ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান।

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সিলেট জেলা পুলিশের আওতাভুক্ত থানাগুলোর ১৪ জন পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এতে পুলিশ সদস্যরা মোটেই বিচলিত নয় দাবি করে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এটা জেনেই পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।

পুলিশ সুপার জানান, করোনা সংক্রমণ রোধ ও অপরাধ দমনের নিয়মিত দায়িত্ব পালন ছাড়াও পুলিশ অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলার বেদে, জেলে, হিজড়া, চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬ সহস্রাধিক পরিবারের মধ্যে পাঠানো হয়েছে খাদ্য উপহার। সংকটে থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারদের জন্য চালু করা হয়েছে হটলাইন। ফোন পেলেই ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার।

 জেলা পুলিশের মতো রাতদিন কাজ করছে মহানগর পুলিশও। ইতিমধ্যে তারাও পাঁচ সহস্রাধিক অসহায় পরিবারের মধ্যে পাঠিয়েছে খাদ্য উপহার। করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়া শ্রমজীবীদের হাতে তুলে দিয়েছে আর্থিক সহায়তা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, করোনা সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মহানগর পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা।

পুলিশের এই মানবিক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে সনাক সিলেটের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, করোনার এ সময়ে পুলিশ প্রমাণ করেছে তারা কতটুকু মানবিক। তাদের এ কর্মকান্ড ও মানসিকতা ধরে রাখতে পারলে তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের বন্ধু হিসেবেই বিবেচিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + three =