ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানের’প্রভাবে কুয়াকাটা সৈকত কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি নিহত-১

0
484

আনোয়ার হোসেন আনু: ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পানের’ প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সহ কলাপাড়া সমুদ্র উপকুলীয় এলাকায় প্রায় ১হাজারেরও বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি ও কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্ফান ও আমাবস্যার জো-এর প্রভাবে নি¤œাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ের আগাতে গাছপালা পুড়ে গেছে। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকতের মৌসুমী ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সমুদ্রের ঢেউ আছওে পরে। বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছিল। এছাড়া মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিচকাটা জলকপাট আন্ধারমানিক নদীর পানির চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের কবলে শত শত জেলের জাল সমুদ্রের শ্রোতে ভেসে গেছে। কুয়াকাটা আশার আলো জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন, বঙ্গোপসাগারে প্রচন্ড উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডবে সৈকতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সাগর থেকে উঠে আসা ৪-৫ ফুট উচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। সৈকতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলেরা ঝড়ের তান্ডবে সাগরে নামতে না পারায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে কলাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকাসহ উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি, চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, বালিয়াতলী খেয়াঘাটের বাহির পাশের মানুষজনের কাঁচা ঘর-বাড়ি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

বুধবার সকাল থেকে মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মানুষজনের ভোগান্তি হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষদের উপজেলা প্রশাসন,পৌর প্রশাসক,জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শুকনা খাবার সরবাহ করেছে। অনেক স্থানে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও রান্না করা কোনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে কুয়াকাটায় কিছু কিছু আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জনসাধারনের জন্য হোটেল খুলে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগিরা।

এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সিপিসি টিম লীডার মো. শাহ আলম মীর (৫৪) প্রচার কাজের সময় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে। বৃহস্পতিবার আলম মীর এর লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘূর্নিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ৫/৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে বুধবার সকালে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা জানান, পৌর এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুরো ও আংশিক বিধস্ত হয়েছে। সবচেয়ে কৃষি খাতে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। কলাপাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল খান বলেন, তিনি ২টি পৌরসভা সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করেছেন। কাচা ঘরবাড়ির চেয়ে কৃষি ও মৎস্য চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে সরেজমিনে তিনি ঘুরে দেখেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে এ উপজেলায় ৭৬ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য, নগদ ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা দিয়ে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার দুর্গত মানুষকে যথাসম্ভব সেবা দেয়া হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ১৮ মে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আশ্রয়কেন্দ্রে আলোর ব্যবস্থা, শুকনো ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও দুটি পৌরসভার মেয়রদের নির্দেশ দিয়েেেছন। স্থানীয় জনপ্রতিরা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষদের এ বরাদ্ধ দিয়ে সেবা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + five =