সাংবাদিকদের দশ হাজার টাকা প্রনোদনা প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণঃ

সাংবাদিকদের দশ হাজার টাকা প্রনোদনা প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণঃ

0
2626

বাংলাদেশ সরকার ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকদেরকে বিশেষ প্রনোদনা হিসেবে দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা, করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের জন্য অনেক পত্রিকার মালিকরা তাদের সাংবাদিকদের বেতনভাতা দিতে পারছেন না।


দেশে যতগুলো পত্রিকা আছে তার তিন-চতুর্থাংশ অর্থাৎ চার ভাগের তিন ভাগই ডিএফপিভূক্ত নয় অর্থাৎ সরকারি বিজ্ঞাপণ পান না। যেসব পত্রিকা সরকারি ডিএফপিভূক্ত তারা সরকারি বিজ্ঞাপণ পেয়ে থাকে। ডিএফপিভূক্ত পত্রিকার বিজ্ঞাপণের হার তিন শ্রেণির অর্থাৎ ক, খ, গ শ্রেণির। ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশি। এসব শ্রেণি নির্ধারণ করা হয় পত্রিকার সার্কুলেশন, প্রচার সংখ্যা ও স্থান উপর। অর্থাৎ রাজধানী ছাড়া বিভাগীয় ও জেলা শহর হতে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোর প্রচার সংখ্যা অনুসারে বিজ্ঞাপণের বিভিন্ন দর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একই সাইজের এবং ধরণের বিজ্ঞাপণ পত্রিকায় ছাপা হলে কি হবে –  বিজ্ঞাণের দর কিন্তু  একই হবে না। দর নির্ভর করবে সেই পত্রিকার প্রচার সংখ্যা, শ্রেণি এবং স্থান ভেদের উপর। ঠিক একইভাবে ডিএফপিভূক্ত পত্রিকার সাংবাদিকদের বেতনভাতা সেই পত্রিকার প্রচার সংখ্যা, শ্রেণি ও স্থান ভেদে কয়েক রকমের কম বেশি হয়ে থাকে। এবারে জানতে চেষ্টা করি – সব সাংবাদিকরাই কি “সাংবাদিক ইউনিয়ন”এর সদস্য হতে পারেন? এক কথায় উত্তর হচ্ছে “না”।

সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা কি? এক কথায় উত্তর হচ্ছে – তারাই সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হতে পারেন – যে সকল সাংবাদিক ডিএফপিভূক্ত ওয়েজ বোর্ডের বেতনভাতা ও সুযোগসুবিধা ভোগী দৈনিক পত্রিকার নিয়োগপত্রপ্রাপ্ত সাংবাদিকগণ। তাহলে এটি সুস্পস্ট যে, ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকগণ সরকারি ওয়েজ বোর্ড রেয়েদাদ অনুসারে বেতনভাতা ও সুযোগসুবিধা ভোগী সাংবাদিক। প্রতি মাসে বেতন উত্তোলনের সময় ডিএফপিভূক্ত পত্রিকার সাংবাদিকগণকে “বেতন রিসিভ রেজিস্টারে” রেভিনিউ স্ট্যাম্পের উপরে স্বাক্ষর করে বেতনভাতার অর্থ চেকের মাধ্যমে গ্রহন করতে হয় এবং সেই বেতন রেজিস্টার সীট ডিএফপি’র অডিটের সময় উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক। ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকগণ ২০২০ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বেতনভাতা পেয়েছেন তাদের সংশ্লিষ্ট পত্রিকার কাছ থেকে।

তাদেরকে কাজ করিয়ে নেওয়ার পরও যদি কোন পত্রিকার মালিক বেতনভাতা দিয়ে না থাকেন সেক্ষেত্রে সাংবাদিক ইউনিয়নের কাছে তাদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে এযাবৎ এ ধরণের কোন অভিযোগ আসে নাই। ডিএফপিভূক্ত পত্রিকাগুলো সরকারি নির্ধারিত ছুটি ছাড়া পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রাখতে পারবে না। বন্ধ রাখলে পত্রিকার ডিএফপি বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হয় যে, ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকগণ তাদের পত্রিকার কাজে নিয়োজিত আছেন এবং নিয়মিত বেতনভাতা ও সুযোগসুবিধাদি পাচ্ছেন। 

এবারে ডিএফপিভূক্ত পত্রিকার চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকদের কথায় আসা যাক। ডিএফপিভূক্ত পত্রিকার মালিকরা যদি বিধি অনুসারে যথাযথভাবে কোন সাংবাদিককে চাকুরীচ্যুত করে থাকেন তাহলে কারোরই কিছুই করার নেই। তবে করোনাভাইরাস কালীন মহা দূর্যোগের সময় চাকুরীচ্যুত করা অমানবিক। কোনো সাংবাদিককে তার পত্রিকর মালিক যদি অমানবিক এবং অবৈধভাবে চাকুরিচ্যুত করে থাকেন সেক্ষেত্রে সরকার তদন্ত অন্ত সেই পত্রিকার ডিএফপি বাতিল করাসহ বিধি অনুসারে অনেক কিছুই করতে পারে। প্রয়োজনে সরকার ৭ দিনের নোটিশ দিয়ে সেই পত্রিকার ডিক্লারেশনও বাতিল করে দিতে পারে।

এবারে আসা যাক ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকদের দশ হাজার টাকা করে প্রনোদনা দেওয়ার প্রশ্নে। ইউনিয়নভূক্ত একজন সর্বনিম্ন পদের সাংবাদিক অর্থাৎ একজন নতুন যোগদানকারী স্টাফ রিপোর্টারের মাসিক বেতন ৬৭,১১২/-  টাকা। তাহলে সিনিয়র সাংবাদিকদের বেতন লক্ষ টাকার অধিক। সাংবাদিক ইউনিয়নের সর্ব কনিষ্ঠ সাংবাদিকের বেতন ৬৭ হাজার টাকারও বেশি – তাদেরকে কি দশ হাজার টাকার প্রনোদনা প্রদান করা বাঞ্ছনীয় কি-না? সরকারের টাকা থাকলে সরকার দশ হাজার কেন আরো বেশি টাকা দিক – তাতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। এদিকে তিন-চতুর্থাংশ সংবাদপত্র অর্থাৎ চার ভাগের তিন ভাগ পত্রিকা কিন্তু ডিএফপিভূক্ত নয়। সেই সব পত্রিকার সাংবাদিকরা ৬৭ হাজার টাকা নয়, তারা মাসিক বেতন বা সম্মানি তিন হাজার টাকাও পান না। এই মহাবিপদের সময় ৬৭ হাজারের টাকার অধিক বেতনভূক্ত সাংবাদিকদের জন্য সরকার যদি দশ হাজার টাকা করে প্রনোদনা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করে – তাহলে যে সকল সাংবাদিক তিন হাজার টাকাও পান না, তাদের এই মহা বিপদের সময় সরকারের নিশ্চয়ই অনেক কিছুই করণীয় আছে।


দেশে কতগুলো সংবাদপত্র আছে, সকল সাংবাদিকের সংখ্যা কত, দেশে কতগুলো সংবাদপত্র ডিএফপিভূক্ত,  ইউনিয়নভূক্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা কত – এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর, স্বচ্ছ চিত্র ও তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রনোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে সদাসয় সরকার বিমাতা সুলভ দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণ প্রদর্শন না করে নিরপেক্ষ ও স্বীয় মাতাসুলভ আচরণ ও বন্টন করবে মর্মে সাংবাদিক সমাজ তথা দেশবাসী একান্তভাবে আশা পোষণ করছে।


এস এম মোরশেদ
০১৯১১৩৮৫৯৭০

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 7 =