ভ্রমন গল্প: সাদা পাথরের দেশে ছুটি দিগন্তে গ্রুপ

0
561

সিলেট জেলার ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জে ভোলাগঞ্জের অবস্থান। ভোলাগঞ্জের বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানির প্রবাহ ধলাই নদের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। এই নদের উৎস মুখের পাথরের জায়গাটুকু ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট বা “সাদা পাথর” নামে পরিচিত। ধলাই নদীর অপূর্ব রূপ, সবুজ পাহাড় ঘেরা এলাকা জুড়ে অজস্র সাদা পাথর, আকাশের নীল ছায়া রেখে যায় পাথরে জমে থাকা স্ফটিক জলে। দূরের পাহাড়গুলোর উপর মেঘের ছড়াছড়ি, সাথে একটা দুটো ঝর্ণার গড়িয়ে পড়া। নদীর টলমলে হাঁটু পানির তলায় বালুর গালিচা। চিক চিক করা রূপালী বালু আর ছোট বড় সাদা অসংখ্য পাথর মিলে এ যেন এক পাথরের রাজ্য। প্রকৃতির খেয়ালে গড়া নিখুঁত ছবির মত সুন্দর, সাদা সাদা পাথর ছড়ানো এই জায়গাটি দেখতে অবিকল বিছানাকান্দির মতো। এ যেন সাদা পাথরের আরেক বিছানাকান্দি। জাফলং, বিছানাকান্দিতে তো অনেকেই গিয়েছেন, এবার ঘুরে আসুন অনিন্দ্য সুন্দর ভোলাগঞ্জ থেকে।

ছুটি দিগন্তে ট্রাভেল গ্রুপ হতে আমরা গিয়েছিলাম সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জে। আমরা প্রায় সকাল ৭টায় সিলেট স্টেশনে পৌঁছায়, তখন বাইরে প্রচুর বৃষ্টি। সিলেট স্টেশনের একটা টি স্টলে আমি চায়ে চুমুক দিই, তৌকীর তখন আমাদের গ্রুপে যোগ দিতে বাসে আসা চট্টগ্রামের দু,জন সুন্দরীকে রিসিভ করতে ব্যস্ত। এর মধ্যে আমাদের লেগুনার ব্যবস্থা হয়ে যায়, আমরা যার যার মতো লেগুনারে উঠে পড়ি।

লেগুনার আমাদের পানসি রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দেয়, তখনও প্রচুর বৃষ্টি, এই বৃষ্টির মধ্যে সকাল বেলা চিকেন দিয়ে খিচুড়ি মন্দ নয়। নাস্তা শেষ করে আমরা সবাই আবারো লেগুনারে, যাত্রা ভোলাগঞ্জ। লেগুনারে সবাই এনজয় করতে লাগলো, কখনো গান আবার কখনো বিশেষ কিছু অঞ্চল নিয়ে ট্রল। আমার সামনে বসা চঞ্চল দুটো মেয়ে  চট্টগ্রামের, রাউজানের পশ্চিম গুজরায় অঝপাড়া গাঁয়ে শম্পা বণিক, শ্রাবন্তী(তৃষা ঘোষ) দুজন মেয়ের জন্ম সত্যিই অকল্পনীয়। মানতে হবে  ট্যুরে এই দু’টো মেয়ে না থাকলে সত্যিই এতোটা এনজয় হতো না।

এরমধ্যে বৃষ্টি, জ্যাম এবং কাঁদামাটি সহ শত প্রতিকূলতার মাঝে আমরা এসে পৌঁছায় সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জে। চারদিকে সবুজ পাহাড় ধলাই নদীর মনোলোভা রূপ, নদীর পাড়ে ডিঙি নৌকা, পাহাড়ে মেঘের ছড়াছড়ি, দূর পাহাড়ে কুয়াশার রেখা, সত্যিই এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে এসে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যার যার মতো সবাই নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করে, সবাই যেন আজ সবার কতদিনের পরিচিত, এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়নি আমাদের পরিচয় সবেমাত্র হয়েছে।

একদিকে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়। ধলাই নদীর উজানে এ রাজ্যের অবস্থান। খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় ঘেরা এ রাজ্যের দৃশ্য বড়ই মনোরম। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকায় অবস্থান করে পাহাড় টিলার মনোরম দৃশ্যাবলী অবলোকন করা যায়। সবুজে মোড়া পাহাড়ি এই সৌন্দর্য আমাদের বিমুগ্ধ করে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বন্যার তোড়ে নদী ও ছড়া দিয়ে প্রচুর পাথর ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে জমা হয়। যা সারা বছর উত্তোলন করে থাকেন শ্রমিকরা। এই পাথুরে রাজ্য যেমন চমৎকার তেমনিই উপভোগ্য এখানকার পাথর উত্তোলনের দৃশ্য।

ভোলাগঞ্জের আর একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে। পাথর কোয়ারী, পাহাড়ি মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের পাশাপাশি ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। ১৮৬৪ সালে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। মজার ব্যাপার হলো, এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্ল্যান্টের চারপাশ ঘুরে আবার একীভূত হয়েছে। রোপওয়ের এরিয়া প্রায় একশ একর। আর এ কারণেই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এত আকর্ষণীয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 4 =