খুব হাস্যকর লাগে যখন দেখি মন্ত্রীরা বলে আমরা করোনার থেকেও শক্তিশালী : এমপি হারুন

0
683

জাতীয় সংসদে আজ সোমবার সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেছেন, ‘মানুষের ওপর জুলুম, মানুষের ওপর নিপীড়ন, মানুষের ওপর অত্যাচারের মাত্রা এত বৃদ্ধি পেয়েছে, যে কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আজাব। আজ আমরা যারা ক্ষমতায় রয়েছি, তাদের একটা বিরাট পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’আজ সোমবার জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন হারুনুর রশীদ।

সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কোরআনের মধ্যে দেখেছি, অতীতে আল্লাহপাক হাজার হাজার বছর আগে বিভিন্ন জায়গায় যে আজাব দিয়েছেন, এই আজাবগুলো ছিল এলাকাভিত্তিক, অঞ্চলভিত্তিক, গোত্রভিত্তিক। কিন্তু এবারের এই আজাব গোটা বিশ্বকে আল্লাহ একসঙ্গে ঘিরে ফেলেছেন। এর কারণ, আমরা ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার লোভে, ক্ষমতার মোহে আজ সবকিছুকে ভুলে গেছি।’

বিএনপিদলীয় এ সাংসদ আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে, আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। এ ছাড়া আমাদের দাম্ভিকতা, আমাদের অহংকার দিয়ে আমরা কোনো অবস্থাতেই এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাব না, মুক্তি পাব না। সুতরাং, আমি অনুরোধ করব, আমরা আমাদের অবস্থান, আমাদের জায়গাগুলো চিন্তা করি।’

সারা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত উল্লেখ করে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের মাননীয় মন্ত্রীরা বিভিন্ন বিবৃতি দেন, খুব হাস্যকর লাগে। কখনো বলেন যে, করোনার থেকে আমরা শক্তিশালী, করোনা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা বিজয় অর্জন করব। এটা বুঝতে হবে যে, আজ এটা আল্লাহ কর্তৃক আজাব।

সাত মাস ধরে সারা পৃথিবীকে যেভাবে গ্রাস করেছে, সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত, সারা পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থা আজ সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত। আল্লাহ পাক কোরআনে এ কারণেই বলেছেন, আমার জায়গা থেকে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত এটার জ্ঞান, এটার ফয়সালা না দেব, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা অনুসন্ধান করে, কোনো প্রচেষ্টা চালিয়ে এখান থেকে পরিত্রাণ পাবে না। এটা আল্লাহপাকের কোরআনের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা।’

হারুনুর রশীদ অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আজ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার অবশ্যই জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। আজ জাতির মধ্যে যে ক্ষতগুলো সৃষ্টি হয়েছে, এই ক্ষত দূর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া, আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।’

হটস্পট কুমিল্লায় আ.লীগ নেতা ও চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের মৃত্যু করোনাভাইরাসের জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত কুমিল্লায় করোনার সংক্রমণ, মৃত্যু ও শনাক্ত লাগামহীন গতিতে বাড়ছে। সোমবার (১৫ জুন) একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কলেজ অধ্যক্ষ ও এক ইউপি চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও সাতজন।

এদিকে, সোমবার করোনার পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে আরও ৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮ জনে। সোমবার করোনা পজিটিভ নিয়ে চারজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, সোমবার প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীতে ১৪ জন, বুড়িচংয়ে পাঁচজন, লাকসামে সাতজন, ব্রাহ্মণপাড়ায় সাতজন, বরুড়ায় দুইজন, দেবিদ্বারে ১১ জন, মুরাদনগর, সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লালমাইয়ে একজন করে আক্রান্ত রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত জেলা থেকে ১৪ হাজার ৩০০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত রিপোর্ট এসেছে ১২ হাজার ৬৬৫ জনের। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার আটজনের। সোমবার পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৬৯ জন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনার মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আলকাসুর রহমান কোকা।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৃতের সহকর্মী ও অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাছান ইমাম মজুমদার।

তিনি বলেন, অধ্যক্ষ আলকাসুর রহমান (৭০) শনিবার সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তার করোনার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। করোনা ইউনিটের চিকিৎসকদের পাশাপাশি তার মেয়ে ডা. মৌসুমি ও জামাতা ডা. শাওন চিকিৎসার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছিলেন। সোমবার রাতে তাকে জেলা সদরের চৌয়ারা এলাকার ধনাজোড় গ্রামে দাফন করা হয়েছে। প্রয়াত আলকাসুর রহমান বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) কুমিল্লা জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এছাড়া জেলার বরুড়া উপজেলার ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও শিলমুড়ি দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন মজুমদার (৫৭) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চেয়ারম্যানের আত্মীয় ও স্থানীয় গালিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নাছির উদ্দিন বাহার বলেন, গত বুধবার বিল্লাল চেয়ারম্যান স্ট্রোক করার পর তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এদের পাশাপাশি করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কুমেক হাসপাতালে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। একই সঙ্গে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন আরও দুইজন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সাজেদা খাতুন বলেন, হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মুরাদনগর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মোকলেছুর রহমান, ররুড়ার রতন বনিক, বুড়িচংয়ের শাহ আলম, নাঙ্গলকোটের আবদুল হক ও নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান।

এছাড়া ব্রাহ্মণপাড়ার পল্লী চিকিৎসক মো. আলম ও বরুড়া পৌর এলাকার নুরুল ইসলাম তালুকদার করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − 3 =