মানুষের দুর্দিনে এই দুই সাংবাদিককে জেগে উঠতে দেখেছি: সালেহ উদ্দিন

0
886

খাওয়ার ব্যাপারে কাকের কোন বাছবিচার না থাকলেও এক কাক অন্য কাকের মাংস খায় না। এ ব্যাপারে কাকের নীতিবোধ ও নৈতিকতা প্রবল। কাকের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো কাক খুব বেশি সমব্যথী। কোথায় কোন কাকের মৃত্যু ঘটলে আশপাশের সব কাক সে কাকটিকে ঘিরে সমবেদনা জানাতে থাকে। কাক স্বজাতির ক্ষতি করে না বরং যে কোনো ধরনের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা তার উল্টো । গত ১৫ জুন তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সম্পাদিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ‘নঈম নিজাম ও পীর হাবিবের ব্যাংক হিসাবের তালাশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ঠিকই সাংবাদিকদের মাংস খায়। আরেকটি প্রাণী খায় তার নাম উল্লুক। কতক সাংবাদিক আজ এই শ্রেণিতে পরিণত হয়েছেন ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সংবাদের উৎস, পরিবেশন এবং উপস্থাপনা মনে হয়েছে সম্পূর্ণ আক্রোশমূলকভাবে তারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও নির্বাহ সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান দুজনই দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক।

তাদের জড়িয়ে কোনো ঘটনার সংবাদ অবশ্যই প্রকাশিত হতেই পারে। বিডিনিউজের প্রকাশিত সংবাদের সত্য-মিথ্যা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ায় বিডিনিউজের আক্রোশ ও ইর্ষার বিষয়টি অন্ততঃ আমার কাছে প্রকাশ পেয়েছে।

কারো ব্যাংক হিসাব তলব করলেই কেউ অপরাধী হয়ে যায়? ওয়ান ইলেভেনের সময় যে স্টাইলে সংবাদ পরিবেশন করা হতো আজ এতো বছর পর বিডিনিউজ একই স্টাইলে সংবাদ প্রচার করলো।

বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট নাকি এই অগ্রজ দুই সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বিডিনিউজ এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যই সঠিকভাবে প্রকাশের অধিকার রাখে। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে কার বইয়ে কে কি লিখেছে? কারা টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন—

এগুলোর কি কোনো সম্পর্ক আছে? দেশের জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক প্রচারিত একটি পত্রিকার সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদকের টিভি চ্যানেলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার অধিকার কি নেই।

পীর হাবিব রাজনৈতিক বিষয়াবলীর উপর প্রতিবেদন এবং কলাম লেখেন। তিন দশক ধরে সংবাদপত্রে কাজ করেন তার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্ক থাকা কি দোষণীয় কিছু নাকি? আমি পীর হাবিব, ফজলুল বারী, জায়েদুল হাসান পিন্টু প্রমুখ একসময় জাতীয় পার্টির বিট করতাম। ৯০ এর দশকে যারা জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন তাদের প্রত্যেকের সাথেই আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিলো।

একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রচুর সমালোচনামূলক রিপোর্ট আমরা করেছি। পীর হাবিবেরও সাড়া জাগানো কিছু রিপোর্ট আছে। সুতরাং তার সাথে এইচ এম এরশাদ, আনোয়ার হোসেন মন্জু , নাজিউর রহমানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা দোষের কি হলো?

প্রায় তিনদশক ধরে সংবাদপত্রে কাজ করি। আমার মাথায় ঢুকে না এগুলোর কি সংবাদ মূল্য আছে? এটি তো উল্লুকের মাংস খাওয়ার মতো হলো!

দেশে একটি মহামারি চলছে। এর শেষ কোথায় আমরা জানি না! এ অবস্থায় আপাদমস্তক দুই সাংবাদিককে নিয়ে বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট ব্যস্ত হয়ে পড়লো কেন? যেখানে পিপিই ও মাস্ক নিয়ে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির খবর বাতাসে বহে বেড়াচ্ছে।

হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়ে যাচ্ছে – কোথাও কোন প্রতিকার নেই। এগুলো বাদ দিয়ে সরকারের একটি সংস্থা দুই সাংবাদিকের পেছনে লাগলো কেন? তবে কি তারা এমন কিছু লিখেছেন যা ক্ষমতাধর কারো গায়ে লেগেছে! দিন কয়েক আগে করোনাভাইরাস জয় করে নঈম নিজাম লিখেছিলেন-

“মৃত্যুর দুয়ারে নতুন শপথ

পরিণতির কথা ভাবি না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবই।”

তার আগের দিন পীর হাবিব-“দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের কাছে মাথা নত নয় পরিণতি যাই আসুক ।”

এই শিরোনাম একটি কলাম লিখেছেন।

নঈম নিজাম সম্পাদিত বাংলাদেশ প্রতিদিনে স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংকট, মানুষের হাহাজারি এবং দুর্নীতি নিয়ে সরব থাকতে দেখেছি। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি লিখছেন। এই তো সেদিন লিখেছেন – “জেলা সদর হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫টি করে অক্সিজেন সিলিনডার স্থাপনে কত টাকা লাগে? ঠিকাদারের লাভসহ মাত্র ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।

বেশি বলছি না মাত্র ১০টা করে আইসিইউ স্থাপনে কত যাবে? তিন থেকে সাডে তিন কোটি টাকা। টাকা পয়সার হিসাব নিকাশে কম বেশি হতে পারে। কিন্তু ইসিজি, এক্সরেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন মাঠ পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে কী অসম্ভব কিছু?”

এই কাজগুলো এতদিনে হয়নি। আগামীতে হবে কিনা কেউ জানে না। এটাই বাস্তবতা। আজ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে। এই কাজগুলো আগামী ৬ মাসে কিংবা বছর জুড়ে বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করছি। কিন্তু বাস্তব হলো আমরা এক অনিশ্চিয়তায় বাস করছি । এইখানে ইকুইপমেন্ট থাকলে টেকনিশিয়ান থাকে না। আর টেকনিশিয়ান থাকলে ইকুইপমেন্ট থাকে না। সব কিছু অদ্ভুত!

পীর হাবিব আমাদের অগ্রজ। তিনি সামরিক শাসন ও সাম্প্রদায়িতা বিরোধী সাহসী মিছিলের নেতা। আমরা দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় দীর্ঘকাল এক সঙ্গে কাজ করেছি। বর্তমানে ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার লুটেরা,

অর্থপাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অমিত সাহস নিয়ে অব্যাহতভাবে তিনি লিখছেন। এই তো সেদিন বাংলাদেশ প্রতিদিন – এ তিনি লিখেছেন – “গুলি করে হত্যার চেয়েও বিনা চিকিৎসায় মানুষ খুন মর্মান্তিক।” মানুষের দুর্দিনে এই দুই সাংবাদিকদের জেগে উঠতে থেকেছি। এসব কারণে কি আজ তাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen + 10 =