অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

0
364

এজাজ রহমান: সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নির্দেশনায় গত এপ্রিলে সব ধরনের ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলো জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সরকার নির্দেশিত সুদের হার স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাংকগুলোর রিটেইল, কনজুমার ঋণের সুদহার বিবেচনা করা উচিত। এখন সবারই সংকট চলছে। এই সংকটের সময় ব্যাংকগুলোকেও বাঁচাতে হবে।  এক সাক্ষাৎকারে  সিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘আমি মনে করি ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমরা প্রধান কার্যালয়ে থাকি। সাধারণ গ্রাহকরা আমাদের কাছে আসেন না। যেভাবে নিরাপত্তা থাকে, শাখাপর্যায়ে সেই নিরাপত্তা নেই। সেখানে বিপুলসংখ্যক গ্রাহক আসেন। কর্মকর্তাদের বাইরে যেতে হয়। তাই তারা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের পুরো আর্থিক কর্মকান্ডে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। তবে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে না। ব্যাংকগুলো আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে শিল্প খাতে।

তবে এখনো শঙ্কা আছে। মানুষ স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে না। আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস করছেন। স্বাস্থ্য সচেতন থেকে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু স্বাভাবিক গতিতে সবকিছু চলছে না।’তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যাংকের মুনাফায় ঘাটতি পড়বে। সব ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করেছে।

বর্তমানে ব্যবসা পরিস্থিতি খারাপ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকিং মুনাফায়। ইতিমধ্যে ব্যাংকের এক-চতুর্থাংশ মুনাফা কমেছে। শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার অবশ্যই একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে ব্যাংকিং মুনাফাও দেখতে হবে। এ জন্য রিটেইল ঋণের সুদহার নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা উচিত। কারণ ব্যাংকের তো অবশ্যই মুনাফা করতে হবে।’

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সিটি ব্যাংকের তারল্য সংকট নেই। তারল্য সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ আমাদের প্রচুর ট্রেজারি বিল, বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে। আমরা যে কোনো সময় সেসব ট্রেজারি বিল, বন্ড থেকে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যবহার করতে পারব। এ ছাড়া ডিপোজিটও আসছে। গ্রাহকরা ডিপোজিট করছেন। সংকট মনে হলেও এই সময় সাধারণ গ্রাহক থেকেই আমরা বেশি ডিপোজিট পেয়েছি।

আমাদের এডি রেশিও ৮৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। আমরা এই সময় তিন খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাংকিং করছি। এর মধ্যে এমএসএমই, এসএমই ও ক্ষুদ্র শিল্পে। এই খাতগুলোতে ২০ হাজার কোটি, ৩০ হাজার কোটি টাকার আলাদা তহবিল রয়েছে।

এগুলো বাস্তবায়নে সিটি ব্যাংক কাজ করছে। আমি মনে করি প্রণোদনার এসব প্যাকেজ বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’ সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলোকে এখন ইনোভেটিভ হতে হবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি ডিপোজিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে।

সবাই যদি একই খাতে অর্থায়ন করে তাহলে অর্থনীতিতে খুব বেশি সুফল পাওয়া নাও যেতে পারে। এ জন্য নতুন ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিয়ে গ্রাহকের কাছে যেতে হবে। ডিপোজিট সংগ্রহের ক্ষেত্রেও গ্রাহককে সুবিধা দিয়ে কাজ করতে হবে। অনলাইন বা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা রয়েছে।

এর মধ্যে পুরো ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে হয়রানি মুক্ত করে গ্রাহকদের সুবিধা দিতে হবে। নইলে গ্রাহক পাওয়া যাবে না। এখন কেউ ঝামেলা করে শাখায় এসে লেনদেন করতে আগ্রহী নয়। তাদের জন্য নতুন ধরনের ব্যাংকিং করতে হবে। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাংকিং খাতে প্রভাব ফেলবে।

সরকার ইতিমধ্যে ঋণ নেওয়া শুরু করেছে। তাই এখনই প্রাইভেট খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। আগামীতে আরও কমবে। এতে প্রাইভেট খাতের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে তারল্য সংকটও তৈরি হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × four =