ছাতকের এক ব্যবসায়ীর ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ

0
464

ছাতক প্রতিনিধি: করোনা মহামারির মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। রিজেন্ট কাণ্ডের পর তার এমন নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। দেশ তোলপাড় করা প্রতারক সাহেদ করিম ও তাঁর সঙ্গী মাসুদ পারভেজ সুনামগঞ্জের এক বালু-পাথর ব্যবাসায়ীর কাছ থেকেও প্রতারণা করে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাওনা টাকা চাইতে ঢাকায় গেলে ওই ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখান সাহেদ। প্রতারণার শিকার সুনামগঞ্জের ছাতকের বালু-পাথর ব্যবসায়ী এখলাছ খান রবিবার এ ব্যাপারে মামলা করার জন্য ছাতক থানায় যোগাযোগ করেছেন। ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মইন উদ্দিন আহমদ জানান, ব্যবসায়ী এখলাছের লিখিত অভিযোগে ভুল থাকায় সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে। ছাতক শহরের মণ্ডলীভোগ এলাকার ব্যবসায়ী এখলাছ খান জানান, গত মে মাসে শাহেদ ও তাঁর এক সহযোগী মাসুদ বালু-পাথর সরবরাহের কথা বলে দুই কোটি টাকার মালামাল নেন। সাহেদ করিম একই বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁর কাছ থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ৪২ টাকার বালু-পাথর নেন। এরপর তাঁকে তিনি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং এক্সকাভেটর মেশিন বিদেশ থেকে আনার জন্য আরো এক লাখ ১০ হাজার ডলারের (প্রায় ৯৪ লাখ টাকার) এলসির কাগজপত্র প্রদান করেন।

সাহেদ কর্তৃক প্রদত্ত চেক এখলাছ খান ছাতকে এসে ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর জানতে পারেন ওই হিসাবে কোনো টাকাই নেই। কয়েকবার ব্যাংকে যোগাযোগ করেও হিসাবে কোন টাকা পান নি। এক্সকাভেটর মেশিন কেনার জন্য যে কোম্পানীকে সাহেদ করিম এলসি দিয়েছিলেন, ঐ কোম্পানীর সঙ্গে এখলাছ খাঁন যোগাযোগ করে জানতে পারেন এলসি ফেরৎ নিয়ে ক্যাশ করে ফেলেছেন সাহেদ করিম।

এরপর অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেও সাহেদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেন নি এখলাছ খাঁন। সর্বশেষ গত ৩০ জুন সাহেদের উত্তরার অফিসে (২/এ, সেক্টর-১২’এর ১৪ নম্বর সড়কের অফিসে) গিয়ে যোগাযোগ করলে তিনি পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে শাসিয়ে দেন, আর যেন কোন দিন তাকে (এখলাছ খানকে) ঢাকায় দেখা না যায়।

এখলাছ খাঁন আরও জানান, অনেক চেষ্টা করে সাহেদের অফিসের এক স্টাফের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, সাহেদ ৩০ জুন উত্তরার অফিসে আসবেন। ২৯ জুন তিনি ঢাকায় চলে যান। ৩০ জুন সকালে সাহেদের অফিসের সামনে গিয়ে বসে থাকেন তিনি। সকাল ১০ টায় সাহেদ অফিসের সামনে এসে নামেন। আমি সামনে গিয়ে বললাম, ‘আপনি কী ঠিক করলেন ভাই, আমাকে চেক দিলেন অ্যাকাউন্টে টাকা নাই।

বলছিলেন আমাকে বিদেশ থেকে এক্সকাভেটর আনিয়ে দেবেন, কোম্পানীকে এলসি দিয়ে আবার ফেরৎ এনে ক্যাশ করে নিয়েছেন। এটা কী করলেন। এই কথা শেষ করতে পারি নি, আমার কপালে পিস্তল থাক করে তিনি বলেন, গুলি করে তোর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেব।

আর যদি ঢাকায় আসিস তোর শরীরে গুলি করার জায়গাও থাকবে না। তার সঙ্গে ৪-৫ জন ছিল, সকলের কাছেই অস্ত্র ছিল। আমি পরে বের হয়ে আসি।’ একইভাবে মাসুদ পারভেজ বালু-পাথর নিয়ে একবার ১৮ লাখ টাকা দেয়। এখনো ৪০ লাখ ৫২ হাজার ২৩৫ টাকা তার কাছে পাওনা আছে। ফোন করলে আজ দেব, কাল দেব বলছিল।

এখন সেও জেলে আছে। ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মইন উদ্দিন আহমদ জানান, এখলাছ খাঁন সকালে সাহেদ ও মাসুদ পারভেজের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। অভিযোগটি সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে। সংশোধন করে আনার পর র‌্যাবের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটি গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 4 =