একটি প্রশংসনীয় ও উত্তম আমল “কবর জিয়ারত’’

0
728

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমান:

পরকালীন ভাবনা মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনে। এর মাধ্যমে পার্থিব জীবনের অসারতা ও ক্ষণস্থায়িত্ব অনুধাবন হয়। অনিঃশেষ জীবনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। উত্তম কাজ ও নেক আমলে জীবন সাজাতে হৃদয় উদ্দীপ্ত হয়। আখিরাতের স্মরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কবর জিয়ারত।

কবর জিয়ারতের মাধ্যমে ইহকালীন অনাসক্তি ও অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। এজন্য একটি প্রশংসনীয় ও উত্তম আমল। মহানবী (সা.) শহীদদের কবর জিয়ারত করতেন। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই কবর জিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এর ওপর মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এর বিপরীত ধারণা পোষণ করা ইমানদারের লক্ষণ নয়। অবশ্য উল্লেখ্য যে, ইসলামের শুরুর দিকে কবর জিয়ারত নিষেধ ছিল। পরে অনুমতি দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কেননা কবর জিয়ারত দুনিয়াবিমুখতা সৃষ্টি করে এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

জিয়ারতের সময়

পুরুষদের জন্য যেকোনো সময় কবর জিয়ারত জায়েজ। প্রতি শুক্রবার না পারলে বৃহস্পতি বা শনি বা সোমবার জিয়ারত করা মোস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২)

তবে শুক্রবারে যাওয়াই ভালো। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তাকে মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৬১১৪)

জিয়ারতের সুন্নত

কবরস্থানে গিয়ে সর্বপ্রথম মৃতের চেহারার দিকে মুখ করে ‘আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা ওয়া নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াতা’ দোয়াটি পড়ে সালাম দিতে হবে। এভাবে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব হয়, সেভাবে দাঁড়ানো যাবে। এরপর ইচ্ছা হলে দরুদ শরিফ ও কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা যাবে।

বিশেষ করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা ইখলাস, সুরা তাকাসুর ইত্যাদি সুরা পড়া যাবে। এরপর হাত না উঠিয়ে মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব করবে; হাত ওঠাতে চাইলে জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২-২৪৩; ফতোয়া-এ-আলমগীরী : ৫/৩৫০)

রাতে জিয়ারত

রাতে জিয়ারত করা জায়েজ। কেননা হাদিস শরিফে শর্তহীনভাবে জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাত বা দিন নির্দিষ্ট করা হয়নি। (ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৫/৪৫৩)

ঈদের দিন জিয়ারত

ঈদের দিন কবর জিয়ারত করা উত্তম। তবে আবশ্যক মনে করা বিদআত। কেউ এই দিন কবর জিয়ারত না করলে, তাকে নিন্দা করা গুনাহের কাজ। (মিরকাতুল মাফাতিহ ৩/৩১; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৯/২০১-২০২)

কবর জিয়ারতে নারীরা

তরুণীদের জন্য কবর জিয়ারতে যাওয়া জায়েজ নেই। বয়স্ক বা বৃদ্ধা নারী কোনো ধরনের বিদআত এবং শরিয়তবহির্ভূত কোনো নিষিদ্ধ কাজ না করে; বরং পরকালীন উপলব্ধির জন্য কবর জিয়ারত করে, তাহলে তাদের জন্য জিয়ারত জায়েজ।

আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) মক্কার বাইরে ইন্তেকাল করেছিলেন। পরে তার মৃতদেহ মক্কায় নিয়ে আসা হয় এবং মক্কার জান্নাতুল মোয়াল্লায় তাকে সমাহিত করা হয়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) তার কবর জিয়ারত করেন এবং তার জন্য দোয়া-মোনাজাত করেন ও তার শোক প্রকাশে কাসিদা (কবিতা আবৃত্তি) পাঠ করেন। (আদ-দুররাতুল লামিয়া) এই বর্ণনার আলোকে বোঝা যায় যে, সংযতপন্থায় নারীরা কবর জিয়ারত করতে পারেন। এতে অস্বাভাবিকতা বা দোষের কিছু নেই। তবে যেসব নারী ধৈর্যহীনতার কারণে ওখানে গিয়ে সাধারণত অস্থিরতা, কান্নাকাটি এবং বিদআত বা শরিয়তবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ে; তাদের যথাসম্ভব কবর জিয়ারত থেকে বিরত রাখা উচিত। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২) নির্জন কবর কিংবা পারিবারিক কবর কাছ থেকে দেখা বা কবরস্থানে আসা-যাওয়া করা আত্মীয়ের জন্য নিষিদ্ধ নয়। তরুণীরা সব শর্ত রক্ষা করে নিকটজনের কবর জিয়ারতে যেতে পারেন।

যা নিষেধ

কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, নামাজ আদায় করা বা সেজদা করা, তার উছিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মানত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি সবই শিরকেরই অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবরের কাছে গিয়ে এমনটি করা সম্পূর্ণ অনুচিত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নারী কবর জিয়ারতকারী, কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণকারী ও তাতে বাতি প্রজ্বালনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩২৩৬)

যদি কেউ এ ধরনের মাজারে এমন মানত করে ফেলে, তবে তা পুরা করা জায়েজ নয়। এটি পুরো করলে সে গুনাহগার হবে। কারণ গুনাহের কাজের মানত করলে তা শুদ্ধ হয় না; তাই পালন তো করাই যাবে না; বরং তওবা করা জরুরি। (ফতোয়া-এ-আলমগীরী : ১/২০৮)

জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর

কবর বা মাজার জিয়ারতের জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়া ঠিক নয়। অবশ্য সেখানে ভিন্ন কোনো কারণে গিয়ে সে এলাকার অলি-বুজুর্গদের কবর জিয়ারত করা অসুবিধার কিছু নয়। তবে রাসুল (সা.)-এর কবর জিয়ারতের বিষয়টি ভিন্ন। অন্যদের কবর-মাজার ও রাসুল (সা.)-এর পবিত্র রওজা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। (রদ্দুল মুহতার : ২/৬২৭) এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, আমি তার সুপারিশকারী হব।’ (বায়হাকি, হাদিস :

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × one =