ভোগান্তিতে পর্যটকসহ স্থানীয় মানুষ… চায়না সিকো কোম্পানীর জলকপাট নির্মাণে ধীরগতি

0
502


আনোয়ার হোসেন আনু,কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: কুয়াকাটা সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন,কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ,মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার ও পায়রা বন্দরে যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক হিসেবে পাউবো’র ৪৮নং পোল্ডারের বেরীবাধঁটি দীর্ঘ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে এই এলাকার বিশাল জনগোষ্টি। এই বেরীবাধঁটির উন্নয়ন কাজ করছে চায়না সিকো কোম্পানী। এই কোম্পানীটি বেরীবাধেঁর উন্নয়নের পাশা পাশি পানি নিস্কাশনের জন্য কয়েকটি জলকপাট বা ¯øুইসগেট নির্মাণ করছে। এসব জলকপাট ও বেরীবাধঁ উন্নয়ন কাজে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে মানুষ। জলকপাটের দুই পাশে অল্প একটু জায়গা। তাতে জমে আছে কাঁদা-মাটি। কোথাও কোথাও পুরো জায়গাটুকুই দেবে গেছে। ফলে এখান থেকে চলাচল করা শুধু কষ্টের নয়, বিপজ্জনকও। এমন বিপদজনক সড়ক দিয়ে ঝুকিঁ নিয়ে এখানকার মানুষদের চলাচল করতে হয়। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মৎস্যবন্দর আলীপুর-অনন্তপাড়া সড়কের গোড়া আমখোলাপাড়ায় নির্মিত জলকপাট এলাকার এমন চিত্র নিয়ে এসড়কটি আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।


এ এমন দুরাবস্থার জন্য স্থানীয় মানুষজন, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে কুয়াকাটা সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। নিকটবর্তী জায়গায় প্রথম শ্রেণির এ কেপিআই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। অপরদিকে এই সড়ক দিয়ে কুয়াকাটার লতাচাপলী,ধুলাসার,বালিয়াতলী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি সীমাহীন। রোগী বহন থেকে শুরু করে জরুরী প্রয়োজনে এ সড়কটি এখানকার মানুষদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই সড়কটির এমন বেহাল দশার কারনে ঝুকিঁ নিয়ে নদী পথে চলাচল করতে হচ্ছে।
কুয়াকাটা সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানান, সড়ক ও জলকপাটের এমন দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালীর স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পত্র দেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গেলে দেখা গেছে, সড়কের গোড়া আমখোলা পাড়া অংশে জলকপাট নির্মাণের কাজ চলছে। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। প্রবল বর্ষণে জলকপাট এলাকার ওপরের মাটি দেবে নেমে গেছে। যার ফলে এখান থেকে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস চলতে পারেনা। কেবল মোটরসাইকেলে করে মানুষজন চলাচল করে। কিন্তু বেহাল দশার জন্য গর্তে পড়ে, এমনকি রাস্তার বাইরে উল্টে পড়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।


গত সোমবার দুপুরে বায়েজিদ হোসেন (২৫) এবং নুর হোসেন (৩০) নামে দুই জন যাত্রী মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টে পড়ে গুরুতর আহত হয়। অবস্থাটা এমন এখান থেকে পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও মানুষজনের কষ্ট হয়। সড়কটির মাইটভাঙ্গা, লক্ষিবাজার এবং চাপলীবাজার অংশেও একইভাবে আরও চারটি জলকপাট নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ শেষ না করে সবগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এসব জলকপাট এলাকা গুলোতে একই অবস্থা ।


অন্যদিকে এ সড়কটির বিভিন্ন অংশের বিটুমিন উঠে গিয়ে খোয়া-বালু বের হয়ে গেছে। কোনো কোনো অংশের দু’পাশের মাটি পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। প্রবল বর্ষনের কারণে সড়কটিতে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)-১ এর আওতায় ৪৮নং পোল্ডারের ওই সড়কের বিভিন্ন অংশে জলকপাট নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের পরামর্শক মোঃ মজিবুর রহমান জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ কাজ শুরু হয়। সড়কটির বিভিন্ন অংশে বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার ট্রাক, ছয় চাকার ট্রলি চলাচল করায় সড়কসহ নির্মাণাধীন জলকপাট এলাকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
কুয়াকাটা সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, সমুদ্রতলের মূল কেবলের সাথে সংযোগকারী ল্যান্ড অপটিক্যাল ফাইবার ও পাওয়ার কেবল অত্র স্টেশন থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার নিরাপত্তা বিধানের জন্য কুয়াকাটা সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা কর্মীদের মোটরসাইকেল, পিকআপে করে টহল দিতে হয়।

এছাড়া স্টেশনের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জেনারেটর পরিচালনার জন্য ডিজেল পরিবহনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতে এ সড়কটি ব্যবহার করতে হয়।
তিনি আরও জানান, কুয়াকাটা সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের ব্যান্ডউইথের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংবেদনশীল টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি এ সড়ক দিয়ে পরিবহন করতে হবে। সড়ক ও জলকপাট এলাকার দুরাবস্থার জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিদেশী প্রকৌশলীরা স্টেশনে আসতে পারছেনা। বিদেশী প্রকৌশলীদের আসার তারিখ এর আগেও দুই দফা নির্ধারণ করে তা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানী লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান বলেন, ‘সড়কটির ওই অংশের ভয়াবহ অবস্থার জন্য আমাদের কাজে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কুয়াকাটা সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর কাজ বিলম্বিত হলে দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ওই সড়কটিতে জলকপাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন সেখানে মাটির কাজ যা বাকী আছে, তা দ্রæত শেষ করা হবে বলে জানি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যদি ওই সড়কের ওপর রাস্তা করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ এলজিইডির সাথে আমাদের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আছে। তবে আমাদের বাঁধের ওপর তাঁদের যে রাস্তা আছে, তার ডিজাইন-পরিকল্পনা ঠিক রেখে করতে পারবে। কোন জায়গা থেকে কোন পর্যন্ত রাস্তা করবে সেক্ষেত্রে এলজিইডিকে সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাব করতে হবে। এ প্রস্তাব পেলে আমরা এলজিইডিকে কাজ করার অনুমতি দিতে পারবো। ওইখানে একটি প্রকল্প চলমান আছে। সেই স্থানে নতুন করে আরেকটি প্রকল্প চলতে পারে না বলে পাউবোর এ কর্মকর্তা জানান।
পটুয়াখালীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার বলেন, আমরা আপাপত জরুরীভাবে ওই সড়কের ৬টি অংশে মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা সড়ক এলাকা সুনির্দিষ্ট করে পত্র দিবো। তাঁরা অনাপত্তি দিলে প্রাক্কলন তৈরি করে আমরা পুরো সড়কটিই নতুন করে নির্মাণ করবো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × three =