বাংলাদেশ-বাঙালী জাতি এবং বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ

0
1046

-সাহেনা আক্তার

“এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর, গিরি ও নদী

ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু, ফিরিয়া আসিতে যদি,

হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা

এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে মাতা-পিতা, বোন-ভ্রাতা”।

১৫ আগষ্ট ১৯৭৫। বাঙালি জাতির অশ্রæভেজা কলঙ্কময় রাত। এ রাতে স্বাধিন বাংলার স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ি এক বীরের নাম। ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশটির মাটি ও মানুষ শোকাহত হৃদয়ে স্মরণ করছে রক্তঝরা ১৫ আগষ্টকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমাদের হৃদয়ের গহিনের গভীর থেকে বিন¤্র শ্রদ্ধা।

“তুমি জন্মেছিলে বলেই

জন্ম নিয়েছে দেশ

মুজিব তোমার আরেকটি নাম

স্বাধিন বাংলাদেশ”।

বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশ, বাংলাভাষা, বাঙালি সমনাম। দক্ষিণ এশিয়ার ৫ হাজার বছরের ইতিহাসে এই আমরাইতো একমাত্র জাতি যারা সশ্রস্ত্র সংগ্রাম করে প্রত্যেক্ষ যুদ্ধ করে স্বাধিনতা অর্জন করেছি একটি মানুষের ডাকে, একটি মাত্র রণমন্ত্র  কন্ঠে ধারণ করে। সেই মানুষটি-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর সেই রণমন্ত্র-জয়বাংলা। তিনি সেই মানুষ, যিনি বলেছিলেন, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বলবো-আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার সংস্কৃতি, বাংলা আমার মাটি, বাংলা আমার সাহিত্য, বাংলা আমার সব, বাংলা আমার নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে।

১৯৭৫ সালের পনেরো আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে একদল বিপদগামী সেনা সদস্য। পনের আগষ্ট; বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পয়তাল্লিশ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এক হৃদয় বিদারক,পৈশাচিক,মর্মান্তিক দিন এটি। দিনটি বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক বেদনাক্লিষ্ট ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাৎ বরণ করেন।

আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। তাঁরই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে বহুকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৮-এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গনঅভ্যুত্থান এবং ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনসহ এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

এদেশের জনগণকে বাঙালী জাতীয়তাবাদে উদ্ধুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এই মহান নেতাই। এ জন্য কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয় তাঁকে বহুবার। প্রাসঙ্গিকভাবেই বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি এবং বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। দেশের স্বাধীনতা বিরোধী, ষড়যন্ত্রকারী ও ঘাতক চক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবণে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন।

একই সাথে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, সহোদর শেখ নাসেরসহ আরো অনেকে। ঘাতকচক্র হত্যা করেছে জাতির পিতাকে, জাতির বিবেককে, জাতির গৌরবকে। হত্যা করতে পারেনি জাতির মন থেকে তাঁর আদর্শকে, তাঁর নীতিকে। বাংলাদেশ নামক দেশটির মহান স্থপতির বিদায়ে বাস্তবিক অর্থেই দেশ অনেক বছর পিছিয়ে যায়।

যে  ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এ অপূরনীয় ক্ষতি পোষাবার নয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পয়তাল্লিশ তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মানবিক ভাবনার শুভ ও কল্যাণকর দিগগুলোকে প্রগতিশীল চিন্তায় ¯œাত করে সব অপরাধ স্বার্থপরতা, হিং¯্রতা, জলাঞ্জলী দিয়ে অপরাধহীন-কুলুষহীন একটি সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়ায় হৃদয়স্পর্শী প্রত্যয়ে একাতœতা ঘোষনা করে নির্মোহ দৃষ্টিতে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে তোলি।

নয় মাস মাতৃগর্ভ হতে বিদীর্ণ হয়ে শিশু অনেক বেদনায় যখন ভূমিষ্ট হয় তখন কোনো পাপ, কোনো মলিনতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনা। সে আতœচিৎকার করে বদ্ধমুষ্টি তুলে এই পৃথিবীতে স্বীয় অধিকার ঘোষনা করে, তেমনি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম সেই বাংলাদেশের সকল ত্রæটি-বিচ্যুতি অতিক্রম করে এ বিশ্বে আমাদের সম্মান স্ব-গৌরবে বিরাজ করুক এই প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আমরা আমাদের নিজ-নিজ স্বাধীন সত্ত¡ার কাছে, একটি অপরাধহীন, সন্ত্রাসহীন,

সূখী-সমৃদ্ধ, নির্মূল-নির্মোহ দেশ ফিরিয়ে আনার, যেভাবে একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমরা বাঙালি জাতি ঐক্যের সূদৃঢ় দেয়াল রচনা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। কেননা- বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি এবং বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ।  

-লেখক : সাধারণ সম্পাদক, প্রগতিশীল সংবাদপত্র পাঠক লেখক ফোরাম, কেন্দ্রিয় কমিটি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − twelve =