চাঁপাইনবাবগঞ্জে রানিহাটী ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপটে কেটে নিলো শতবর্ষী বটবৃক্ষ জণমনে ক্ষোভ

0
448

ফয়সাল আজম অপু: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ৬ নং রানিহাটী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহসিন আলির বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শতবর্ষী সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, এই গাছ কাটার মহৎসবে মেতেছে এর মূলহোতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহসিন আলি সহ তারই কয়েকজন মদদপুষ্ট ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে।এই শতবর্ষী বটবৃক্ষ (পাইকড় গাছ) সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে টেন্ডার ছাড়াই স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজ আত্মীয়ের কাছে মাত্র ২২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। সরজমিনে, রানিহাটী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাটের ফুলতলায় (মাছপট্টি) গিয়ে এই বৃহৎ বটবৃক্ষ (পাইকড় গাছ) টি প্রকাশ্য কাটতে দেখা যায়। গাছ কাটার দেখভাল করতে দেখা যায় আলহাজ্ব মহসিন আলি চেয়ারম্যানের ভাতিজা তোতাকে। কার অনুমতিতে সরকারি গাছ কাটছেন?জানতে চাইলে তোতা বলেন চেয়ারম্যান আমার চাচা হয়, তার কাছেই এই গাছ ২২ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছি। 

এ বিষয়ে আলহাজ্ব মহসিন আলির নিকট জানতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে দেখা মিলে, গাছ কত টাকা? এবং কিভাবে টেন্ডার ছাড়া বিক্রয় করেছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন,

আমি ডিসি মহদয়ের অনুমতি নিয়ে গাছ বিক্রয় করেছি। এখানে এলজিআরডির আওতাই হাটে আগত মানুষের সুবিধার্থে ৩ টি টিন শেড নির্মাণ করা হবে তাই গাছ কাটতে বাধ্য হয়েছি। অবশ্য এর সঠিক কোন সত্যতা মিলেনি।  

শতবর্ষী বটবৃক্ষের মূল্য মাত্র ২২ হাজার টাকা কেনো এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে টেন্ডার ছাড়া গাছ বিক্রয় করার এখতিয়ার আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর না দিয়ে এই প্রতিবেদকে ম্যানেজের প্রস্তাব দেন এবং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান।

এবং স্থানীয় সদর ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নাসিম মেম্বারের সাথে দেখা করতে বলেন।

নাসিম মেম্বার বলেন, আমি গাছ বিক্রয়ের বিষয়ে জড়িত নয়। তবে এটি আমার ওয়ার্ড বলে চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল, কিন্তু আমি গাছ বিক্রয় কিংবা কেটে ফেলার বিষয়ে সম্মতি দেয়নি। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানের বয়স হয়েছে তার দিকে দেখে নিউজ করে ভাবমূর্তি নষ্ট না করার অনুরোধ জানান।              

অপরদিকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান কয়েকজন মেম্বারকে নিয়ে এসব অনৈতিক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সকল মেম্বারের সাথে সমন্বয় বা পরামর্শ করেন না বলেও জানান তিনি।    

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মোসাদ্দেক হোসেন স্যামপুল মিয়া বলেন, বরাবরই আলহাজ্ব মহসিন আলি এ ধরনের জণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

এতে করে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছ কাটার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া দরকার বলেও জানান তিনি।                  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আরও কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ও ব্যবসায়ী বলেন, মহসিন আলি চেয়ারম্যানের এটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার, এর আগেও বহরম-হঠাৎপাড়ার রাস্তার ৪ টি মেহগনি গাছ ও হাটের যোখিরা-পুকুর পাড়ের কয়েকটি গাছ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিক্রয় করে দিয়েছিলো। আর তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতার দম্ভে রামচন্দ্রপুরহাটের ফুলতলার শতবর্ষী এই বটবৃক্ষ কেটে ফেললো।   

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার মুঠোফোনে জানান, শতবর্ষী বটবৃক্ষ বিক্রয় বা কাটার বিষয়ে কেউ আমার নিকট অভিযোগ করেনি। সত্যি সত্যি চেয়ারম্যান যদি এভাবে গাছ বিক্রয় করে থাকে এটা চরম ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান এভাবে শতবর্ষী গাছ মাত্র ২২ হাজার টাকায় বিক্রয় করতে পারেনা।

গাছ বিক্রয় এবং কেটে ফেলায়, মারাত্মক অপরাধ করেছে, আর এজন্য চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা। এই প্রতিবেদকের নিকট নিউজ করার ও বিস্তারিত  তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার আহবানও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 1 =