Site icon Aparadh Bichitra

ঘরে থাকার নির্দেশে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকার নির্দেশের (লকডাউনের) কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত নারী অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আইসিডিডিআর’বির গবেষক দল এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট (ডব্লিউইএইচআই), অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ নারী ও তাদের পরিবারের ওপর করোনা এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং এটি অস্ট্রেলিয়ার দোহার্টি ইনস্টিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটির অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ দিক থেকে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে বাংলাদেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে এবং নারীদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতোই কেভিড-১৯ প্রতিরোধকল্পে বাংলাদেশে প্রায় দুই মাস ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল ২ হাজার ৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোনো এক বেলা আহার না করে ছিলেন ।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। নারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। উদ্বেগের বিষয় এই যে, নারীদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন, তাদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।

ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি, ইমিরেটাস বিজ্ঞানী, মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, আইসিডিডিআর’বি এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক বলেন, আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের এবং তাদের পরিবারের ওপর করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব নিরূপণ করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারীবান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।

তিনি আরও বলেন, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে খাদ্য সংস্থানের জন্য তারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই গবেষণা করোনা মহামারির ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।

লকডাউনের প্রভাবের বিষয়ে বলতে গিয়ে ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শান্ত রায়ান পারিচা বলেন, লকডাউনের আগের এবং লকডাউন থাকা অবস্থায় পরিবারগুলো কীভাবে চলছিল, তা তুলনা করে আমরা দেখতে পেয়েছি, তারা লকডাউনের সময় অর্থনৈতিক এবং মানসিক দিক দিয়ে বিশেষ চাপের মধ্যে ছিলেন।

গবেষণাটি শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের পরিবার ছাড়াও যেসব পরিবার লকডাউন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সবার সার্বিক কল্যাণ সাধন ও সব ধরনের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। মূলত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সামাজিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং লকডাউনের সময় পারিবারিক নির্যাতন রোধকল্পে গৃহীত কার্যক্রমসহ যাতে সহজে ব্যবহার করা যায় তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।