সিলেট গ্যাস ফিল্ডসে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৫২ জনকে নিয়োগ

0
434

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডে (এসজিএফএল) বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ৫২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কাউকে সিকিউরিটি, কাউকে অফিস পিয়ন হিসেবে ডে লেবার পদে নিয়োগ দেখিয়ে অন্তত কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনেরে অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সূত্র বলছে, নিয়োগকৃতদের অনেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ফলে তাদের ‘টি বয়’ বা অফিস পিয়ন হিসেবে মেনে নিতে পারছেননা খোদ গ্যাস ফিল্ডসেরই অনেক কর্মকর্তা। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)’র ইচ্ছা ও সিবিএ নেতাদের প্রশ্রয়ের কারণে প্রশাসন এ নিয়োগ দেয়ায় তাদের কিছু করার নেই। এদিকে, এ নিয়োগের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নতুন করে ৯৪টি পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে প্রকৌশলীসহ পদস্থ পদ রয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছেন গ্যাসফিল্ডস এলাকা হরিপুরের মানুষ।

স্থানীয় চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজির উদ্দিন বলেন, ‘এলাকার অনেক যুবক বেকার। আমাদের গ্রামেই গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয় ও কূপ এলাকা। সুতরাং স্থানীয়দের নিয়োগ পাওয়ার কথা সবার আগে। কিন্তু বহিরাগতদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গ্যাস ফিল্ডসের বর্তমান এমডি প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুর উল্লাহর মূল উদ্দেশ্যই টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগ দেয়া’।

সুরমা-১ এলাকার বাসিন্দারা জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের অধীনে হরিপুরের ৮ নম্বর কূপে গ্যাস কূপ খননের কাজ চলছে। এর আগের কয়েকটি কূপও একই এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকার প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়োগের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বাণিজ্য করতেই স্থানীয় লোক নিয়োগ দেয়নি।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, সম্প্রতি গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষমতা বলে যে ৫২ জন লোক নিয়োগ দিয়েছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত। কেউ অনার্স, কেউ মাস্টার্স পাস করা ছেলে। তাদের ডে লেবার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি হাস্যকর। এছাড়া এই মুহূর্তে ডে লেবার পদে এতো লোক নিয়োগ দেয়ারও কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে একইভাবে গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ লোক নিয়োগের চেষ্টা চালিয়েছিলো। তখন সিবিএ নেতারা বিরোধিতা করেন। এ কারণে লোক নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এবার গ্যাস ফিল্ডস কর্তৃপক্ষ ও সিবিএ’র মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সিন্ডিকেট দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এ হিসেবে ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় কোটি টাকার উপরে।

ছাত্র অধিকার আদায় আন্দোলনের নেতা মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘এমডি ও সিবিএ নেতা পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। নিয়োগ বাণিজ্য হজম করতে তারা তোপের মুখে ‘আউটগোয়িং সোর্স’ হিসেবে তাদের নিয়োগ দেয়ার প্রলাপ বকছে’।

অনৈতিক এ নিয়োগের প্রতিবাদে গত বুধবার গ্যাস ফিল্ডের প্রধান ফটক ঘেরাও করার পর বৃহস্পতিবারও জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। তারা বার বার গ্যাস ফিল্ডসের এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাননি। এ নিয়ে বৃহত্তর হরিপুর অঞ্চলের গ্রামবাসীকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ ও এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলতে গত তিনদিন ধরে সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুর উল্লাহ, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শওকত আলম কাদরী ও সিবিএ’র মেয়াদোত্তীর্ন কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমারের সেলফোনে বিভিন্ন সময়ে অন্তত ৪০ বার কল করা হয়। কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ না করায় তাদেরকে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে ক্ষুধে বার্তা পাঠিয়ে আবারো ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুই বার ফোন লাইনটি কেটে দেন এবং একবার ওয়েটিং (কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন)-এ ছিলেন। একইসঙ্গে মো. শওকত আলম কাদরীও একাধিকবার ওয়েটিং (কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন)-এ ছিলেন। পরে শেষবারের মতো বক্তব্য জানতে তাদের হোয়াটসঅ্যাপে নোট পাঠালেও কেউ সাড়া দেননি।

উল্লেখিত তিনজন সাড়া না দেয়ায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডস-এর চেয়ারম্যান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মো. আবুল মনসুরের সঙ্গে সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ নিয়োগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই’।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − eight =