Site icon Aparadh Bichitra

আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার পাড়

আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙছে পদ্মার পাড়। চাপ চাপ মাটি ধসে পড়ে দীর্ঘ হচ্ছে ভাঙনের চিত্র। প্রায় ৪ কিলেমিটার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে শত শত একর জমিসহ গাছপালা ঘরবাড়ি।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার মধ্যে কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় হারিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। হুমকিতে রয়েছে লক্ষীনগর স্কুলসহ আরো শতাধিক বাড়ি।


জানা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর চরের মানুষ ঘরবাড়ি অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং হুমকির মধ্যে রয়েছে শতাধিক পরিবার ও লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তশানে ভাঙন থেকে ১৫০ মিটার দুরে রয়েছে স্কুলটি। এছাড়া কালিদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্যাত্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর (৩ নম্বর কালিদাসখালী চর) শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ থেকে আবারও নতুন করে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। যে সমস্ত জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তার সিংহ ভাগ জমিতে ছিল আম, খেজুর গাছ ও বাড়িঘর। এবার ভাঙনের কবলে আমার ১০ বিঘা নিজস্ব জমিসহ আম বাগান বিলিন হয়ে গেছে।


৩ নম্বর কালিদাসখালী চর ও চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার ১৫ বিঘা আম বাগান নদীগর্ভে ইতিমধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। এমনকি আমার বাড়িটাও হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন থেকে মাত্র ৬০ মিটার দুরে রয়েছে বাড়ি। নতুনভাবে আবারও যে ভঙনের ডাক তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর বলে কোন চিহৃ থাকবেনা।


চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর ফজলুল হক বলেন, চকরাজাপুর বলে কোন চিহৃ নেই। ইতিমধ্যেই বিলিন হয়ে গেছে। এই ওয়ার্ডের চার ভাগের তিন ভাগ ইতিমধ্যেই পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। নতুনভাবে যেহারে ভাঙা শুরু হয়েছে, এভাবে ভাঙনে থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে এই ওয়ার্ডও বিলিন হয়ে যাবে।


এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আনোয়ার শিকদার বলেন, আমার প্রায় ৩০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডের কোন চিহৃ নেই। এই ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক পরিবার অন্যত্রে চলে গেছে।


কালিদাসখালী চরের রতন আলীর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল। তাও ভাঙনে চলে গেল। দুই সন্তান নিয়ে কি করে চলবো, কথায় যাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। এ কথাগুলো বাড়ি ভেঙে মালামাল গোছানোর সময়ে এ প্রতিবেদকের কাছে বলছিলেন। তার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। সে নিশ্ব হয়ে গেছেন, ঘর তোলার জমিও নেই, টাকাও নেই। ছোট এক শিশুকে পাশে রেখে বাড়ির মালামাল গুছিয়ে স্বামী রতন আলীর মাথা তুলে দিচ্ছেলেন।


এদিকে কয়েক বছরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বসত ভিটা, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্টান, বিজিবি ক্যাম্প, মসজিদ। বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে সর্বহারা হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। এই সব পরিবারের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে পদ্মা। এদের অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসত বাড়ি গড়ে তুলে বসবাস করছে।


চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানুষ। তবে বর্তমানের ভাঙনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনের খবর পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।