Site icon Aparadh Bichitra

আজমিরিগঞ্জে কাউন্সিলর প্রদীপের বিরুদ্ধে বহুমুখী অনিয়মের অভিযোগ

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিরর প্রদীপ কুমার রায়ের বিরুদ্ধে বহুমুখী নিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে হকদরিদ্রদের মাঝে বিজিএফের চাল বিতরনে কম দেয়া সহ গর্ভকালীন ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর আড়াইহাজার টাকার প্রনোদণা বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম সহ সরকারী জমি দখল করে অন্যে কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।কোন এক অদৃশ ক্ষমতার জোড়ে একের পর এক অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে কাউন্সিলর প্রদীপ। আর প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

সরকারী রাস্তার জায়গা দখল করে কলা বাগান


অনুসন্ধানে জানা গেছে, আজমিরিগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার রায়। কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত রয়েছেন। সিন্ডিকেট করে খাস জমি দখলে নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া যেন তার পেশায় পরিনত হয়ে গেছে। সরকারী রাস্তার জমি দখল করে বানিয়েছে কলাগাছের বাগান। সরকারী খাস জমি কারোর কাছে বিক্রি করার বিধান না থাকলেও নিজের ভাইয়ের নামে দখলে নিয়ে একাধিক ভুমিহীন পরিবারের কাছে শতাংশ প্রতি লাখ টাকায় তা বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।


ভুমিহীন নান্নু মিয়া জানান, আমার দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা ৩টি মেয়ে সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়ীতে আশ্রিত।ভুমিহীন হওয়ায় সরকারী খাস জমিতে ঘর বানিয়ে ১০/১৫ বছর বাসবাস করেছে। কিন্তু প্রদীপ মেম্বারকে চাহিদা মতো টাকা দিতে পারিনি বলে আমাকে ঐ জমি থেকে উচ্ছেদ করে এখন তার কলা বাগান বানিয়েছে। আর যারা তাকে টাকা দিয়েছে প্রদীপ তাদেরকে সরকারী জমিতে থাকার সুযোগ দিয়েছে। আমাদের উচ্ছেদ করার সময় প্রদীপের সাথে তর্কবির্ত হয়েছিলো। সেই সময় থেকে প্রদীপ মেম্বার আমাকে পৌরসভার সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা দেয় না। করোনা মহামারীতে প্রধানমন্ত্রী দেয়ার প্রনোদণার আড়াইহাজার টাকা আমাকে দেয়া হয়নি, চাউল দেয়নি। অথচ রঞ্জন রায়ের পুরো ফ্যামিলি আমেরিকা প্রবাসী,আজমিরিগঞ্জ বাজারের হোলসেল ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার তাকেও আড়াইহাজার টাকার প্রনোদণা দিয়েছে প্রদীপ মেম্বার।


খাস জমিতে বসবাসকারী ভুমিহীন রাকেশ রায় বলেন, প্রদীপ মেম্বার তার বড় ভাইয়ের নামে এই সরকারী খাস জমি লিজের মাধম্যে দখল নিয়ে আমার কাছে প্রতি শতাংশ একলাখ দরে বিক্রয় করে ৩ শতাংশ জায়গায় আমাকে বসবাস করার সুযোগ দিয়েছে। এপর্যন্ত আমি প্রদীপ মেম্বারকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে কোন কাগজপত্র দেয় নাই। দেই দিচ্ছি বলে ৪ বছর যাবৎ টালবাহানা করে আসছে। আমার মতো সুধির, জ্যোতিনের নিকট থেকেও টাকা নিয়েছে। তবে স্থানীয় ভুমি অফিস থেকে জানা গেছে সরকারী খাস জমি একমাত্র ভুমিহীনরাই শর্তসাপেক্ষে লিজসুত্রে ভোগদখল করতে পারে। এটা বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। কেউ বিক্রি করলে বা শর্তভঙ্গ করে ব্যবহার করলে লিজ বাতিল হয়ে যাবে।


সুত্র জানায়, করোনাকানী দুর্যোগে ঈদ উপলক্ষে হতদরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএফ প্রকল্পের ১০কেজি করে চাল বরাদ্দ দেন। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের চাল চোর জনপ্রতিনিধিদের মতোর প্রদীপ মেম্বারও এই চাল চুরিতে নেমে পড়েন। মাথাপিছু ২/৩ কেজি চাল ওজনে কম দিয়ে অবশিষ্ট চাল নিজেই ভোগ করেন। হতদরিদ্র শিবু বলেন, ১০ কেজির মধ্যে ৭ কেজি পেয়েছি এটাই তো অনেক কিছু। প্রতিবাদ করলে এটাও পেতাম না।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিন্মআয়ের পরিবারে গর্ভকালীন বিশেষ ভাতা চালু করেছেন। নিন্মআয়ের পরিবারে দুটি সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ৫৫ হাজার টাকা করে এই ভাতা দেয়া হয়। কোন সরকারী বা বেসরকারী চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী ও সচ্ছল আয়ের মানুষ এই ভাতা পাবে না। কিন্তু মেম্বার প্রদীপ এই ভাতা বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। নিন্মআয়ের মানুষদের বঞ্চিত করে মেম্বার নিজের ভাই, ভাতিজা ও আত্মীয়স্বজন সহ সরকারী চাকুরীজীবী, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সহ সচ্ছল আয়ের মানুষের মাঝে এই ভাতা প্রদান করেছে। নদী পারাপারেনৌকার মাঝি সাহিদুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, আমার দুটি সন্তান, নুন আনতে পান্তা ফুরায়, খুব কষ্ঠে সংসার চলছে। আমাকে গর্ভকালীন ভাতা দেয় নাই, আড়াইহাজার টাকার প্রনোদণা দেয় নাই, অথচ বিধান রায়ের ছেলে পায়েল রায় সোনালী ব্যাংকের আজমিরিগঞ্জ শাখার অফিসার পদে চাকুরী করেও আড়াইহাজার টাকার প্রনোদণা পেয়েছে। আবার প্রদীপ মেম্বারের ভাই দিরেন্দ্র রায়ের স্ত্রী শুল্কা রানী রায় শানবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকুরীজীবি, স্বামীর মাসিক আয় ৩০ হাজার উর্দ্ধে তাকে দেয়া হয়েছে গর্ভকালীন বিশেষ ভাতা। দিলু রায়ের স্ত্রী সুহেলা রানী রায় বলেন, দুটি সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকি। ছোট সন্তানে বয়স ১ বছর। মেম্বার তালিকায় নাম দিলে ৫৫ হাজার টাকা গর্ভকালীন ভাতা পেতাম। কিন্তু আমাকে দেয় নাই, যারা তাকে সুবিধা দিয়েছে তারাই কেবল এই ভাতা পেয়েছে।

চাল বিতরনের বিষয়ে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা বিশ্বজিত দাস বলেন, ট্যাগ অফিসার হিসেবে চাল বিতরনের সময় আমার উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলে চাল বিতরনের দিন প্রদীপ মেম্বার আমাকে জানায়নি। মেম্বার নিজের খেয়ালখুশি মতোর চাল বিতরন করেছে। নির্ধারিত তারিখে চাল বিতরন না করে এবং আমকে না জানিয়ে অন্য তারিখে বিতরন করার সময় এলাকাবাসী আমাকে ফোনে করে অবগত করে। কিন্তু সেই সময় অফিসের অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে পারিনি। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে আজমিরিগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো: গোলাম ফারুক বলেন, কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার রায় চাল বিতরনে করেছে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কোন অপকর্ম করলে ভুক্তভোগিরা তার বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট অভিযোগ না দিলে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না। সরকারী রাস্তা ও খাস জমি দখল করে বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।