সুনামগঞ্জ সীমান্তে চালু হয়েছে রাজস্ব বিহীন বাংলা কয়লা

0
238

হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আবার চালু হয়েছে সরকারের রাজস্ব বিহীন বাংলা কয়লা। প্রায় ৬মাস এই কয়লা বিক্রি বন্ধ থাকার পর আজ ২৫.০৯.২০ইং শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত সমসার হাওর ও পাশর্^বর্তী কলাগাঁও নদীতে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করা শুরু হয়। আগামী ৩দিন যাবত চলবে এই বাংলা কয়লা পরিবহণ। তারপর আবার বন্ধ থাকবে বলে জানাগেছে। কিন্তু বাংলা কয়লা আসলে কি ? । কেন এই কয়লা এতদিন বন্ধ ছিল ? । আবার কেনই বা হঠাৎ করে চালু হল ? । এনিয়ে বৈধ কয়লা ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।


খোঁজ নিয়ে জানাগেছে-আইনগত জটিলতার কারণে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া,বাগলী ও চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভারত থেকে বৈধ পথে কয়লা আমদানী বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগে সীমান্তের চাঁরাগাঁও ও কলাগাঁও সীমান্ত এলাকাতে প্রায় ২ হাজার মে.টন কয়লা গত ৬মাসে মজুত করেছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কিন্তু সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত ও আইনগত বৈধতা না থাকার কারণে বিজিবি কয়লাগুলো আটক করে রাখে।

প্রথমত- এই কয়লা সংগ্রহ করা হয় ভারত থেকে ট্রাক দিয়ে পরিবহণের সময়,রাস্তায় পড়ে যাওয়া কয়লা শ্রমিকরা কুড়িয়ে জমা করে। কিন্তু ভারত থেকে বৈধ পথে কয়লা আমদানী বন্ধ রয়েছে ১বছর যাবত। দ্বিতীয়ত- ভারতে অবস্থিত কয়লার ডিপোতে মজুত রাখা কয়লা বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ী ছড়া দিয়ে ভেসে আসে। আর সেই কয়লা বালির মাঝ থেকে ঠেলা জাল ও বাঁশের তৈরি চালুন দিয়ে উত্তোলন করে শ্রমিকরা। তৃতীয়ত- নৌকায় পরিবহণের সময় ও শুল্কস্টেশনের ডিপো থেকে একদল চোর কয়লা চুরি করে চোরাচালানীদের কাছে বিক্রি করে। চতুর্থত- সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা অবৈধ ভাবে প্রতিরাতে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করে। এই ৪ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা কয়লাগুলোকে একত্রে মিশ্রণ করা হয়। তাই স্থানীয় ভাবে এই কয়লাকে বাংলা কয়লা বলা হয়। তবে মূলত বাংলা কয়লা হচ্ছে-নদী ও ছড়া থেকে শ্রমিকদের উত্তোলনকৃত কয়লা। কিন্তু সারা বছরে ৫শ মে.টন কয়লা উত্তোলন করতে পারেনা এলাকার শ্রমিকরা। তাহলে হাজার হাজার মে.টন কয়লা আসে কোথায় থেকে। এছাড়া বাংলা কয়লা বৈধ কয়লার তুলনায় মূল্য কম এবং তার গুণগত মানও খুবই নিন্ম মানের। কারণ বাংলা কয়লায় থাকে বালি,পাথর ও কাল মাটির মিশ্রন।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশনের বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর অবৈধ বাংলা কয়লা থেকে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নামে ১ মে.টন বাংলা কয়লা থেকে ৩শত টাকা করে চাঁদা নেওয়া হত। আর চাঁদার টাকা উত্তোলন করার জন্য নিয়োজিত করা হতো কয়েকজন সোর্স। এসব বিষয় নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর চাঁরাগাঁও,বাগলী ও বড়ছড়া শুল্কস্টেশন এলাকায় বাংলা কয়লা বিক্রি বন্ধ করে দেয় বিজিবি। এরপর থেকে চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশন ও কলাগাঁও সহ বাগলী ও বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের এলাকার আশেপাশে স্তুপ আকারে হাজার হাজার মে.টন অবৈধ বাংলা কয়লা মজুত করে রাখা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের কাছ থেকে ৩দিনের অনুমতি নিয়ে আজ ২৫.০৯.২০ইং শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে কলাগাঁও ও চাঁরাগাঁও সীমান্তে আটক থাকা প্রায় ২ হাজার মে.টন অবৈধ বাংলা কয়লা আবার চালু করা হয়। তবে আগের মতো প্রকাশে চাঁদা নেওয়া হবে না।

কিন্তু বাংলা কয়লাগুলো এলাকা ছড়া হওয়ার পর বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী কয়েকজন লোক দিয়ে গোপনে বাংলা কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিটন কয়লা থেকে ৫শত টাকা করে চাঁদা নেওয়া হবে বলে আলোচনা হচ্ছে। ১ মে.টন বাংলা কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৮হাজার টাকা। আর বৈধ কয়লার মূল্য সাড়ে ১০হাজার টাকা। কিন্তু অবৈধ বাংলা কয়লা থেকে কখনোই সরকারের রাজস্ব নেওয়া হয়না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সিন্ডিকেড তৈরি করে এবং অবৈধ বাংলা কয়লার ব্যবসা করে প্রত্যেককেই হয়েগেছে কোটিপতি।


বাংলা কয়লার ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাকসুদুল আলমের বক্তব্য জানার জন্য তার সরকারী মোবাইল নাম্বারে ( ০১৭৬৯-৬০৩১৩০ ) কল করার পর প্রথমে ব্যস্ত তারপর নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এব্যাপারে চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার নির্মল বলেন, বাংলা কয়লার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না,এবিয়ষে কিছু বলতে পারব না। সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধ ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহযোগীতা কামনা করছেন তাহিপুর উপজেলার সর্বস্থরের জনসাধারণ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × four =