অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সবুজ বড়–য়া, চট্টগ্রামের খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরীর বডিগার্ড হিসেবে ঐ এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। তার হাতে রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা নামের জাদুরকাঠি, কখন কাকে মামলার ফাঁদে ফাসাতে হবে এই কাজে সে খুবই দক্ষ। কখন কাকে গ্রেপ্তার করতে হবে, আর ছেড়ে দিতে হবে এই দুইয়ের মাঝে ওসি প্রনব চৌধুরীর জন্য আর্থিক লেনদেনের বিশ্বস্ত হাতিয়ার হলেন এই সবুজ বড়–য়া। মাদকব্য বসায়ী, নারী পাচারকারী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, কালোবাজারী, ভ‚মিদস্যু, চাঁদাবাজ থেকে শুরু করে থানায় সেবা নিতে আসা জনগনের নিকট থেকে ওসি প্রনবের জন্য টাকা কালেকশন করাই সবুজ বড়–য়ার পেশা। সবুজ বড়–য়া ওসি প্রনবের পরিচয় দিয়ে এলাকায় একটি অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তার ভয়ে সবাই আতংকিত। কাকে কোন মামলায় ফাসাতে হবে তা কেবল সবুজ বড়–য়াই ঠিক করে দেন ওসি প্রনবকে। সুত্র জানায়, চট্টগ্রামের কুখ্যাত মাদক সম্রাট আলম প্রতিমাসে ৩ লাখ টাকা মাসোয়ারা দিয়ে ওসি প্রনবের নাকের ডগায় বসে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা করেন। এজন্য ওসির চেয়ারে বসে তিনি আলমকে গ্রেপ্তার না করলেও ডিবির এসআই মো: রবিউল হক ঠিকই তাকে গ্রেপ্তার করে সততার পরিচয় দেন। আলমের মতো অসংখ্য অপরাধীকে দমন না করে তাদেকে পালন করে আসছেন এই গুণধর ওসি। আর আলমের নিকট থেকে ওসি জন্য মাসোয়ারার টাকা কালেকশন করেন সবুজ বড়–য়া।
১২ জুলাই-২০১৯ মানবপাচার ও পতিতা বৃত্তির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আলমের গেস্ট হাউসে গভীর রাতে হানা দিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় এজাহার দায়ের করেন ডিবির এসআই (নিরস্ত্র) মো: রবিউল হক। এজাহার নং ১৫ তারিখ ১২-০৭ ২০১৯ ধারা মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন ২০১২ এর ১১/১২ ধারা।
দীর্ঘ এক যুগ সাজা খেটে জেল থেকে বের হওয়ার তিন মাস পরে ডাকাতির অপবাদে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আব্দুল আজিজ (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন ওসি প্রনব।
ওসি প্রনব চৌধুরী বলেন, খুলশী থানা এলাকায় সংঘটিত একটি ডাকাতির ঘটনার পর ডাকাত লিডার আজিজকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছিলাম। পরে নাসিরাবাদ প্রপার্টিজের পেছনে ঢেবারপাড় এলাকায় তার উপস্থিতির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। সে সময় আজিজ ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। পুলিশ ওপাল্টা গুলিবর্ষণ করলে তারা পিছু হটে। পরে ঢেবারপাড়ের একটি টিলার ওপর আজিজের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
তবে সুত্র জানায়, জেল থেকে বেরিয়ে আজিজ মাদকব্যবসা, নারীপাচার সহ পুরনো ধান্ধা শুরুকরে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাড়ায় ওসি প্রনবের বডিগার্ড খ্যাত সবুজ বড়–য়া। আজিজের কাছে ওসি প্রনবের জন্য ৫ লাখ টাকা মাসিক মাসোয়ারা দাবী করে। কিন্তু আজিজ এতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সবুজের সাথে তার বাগবিতন্ডতার হয়। এর কয়েক দিন পরেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে ঢেবারপাড় এলাকায় একটি টিলার উপর আজিজকে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানায় দায়িত্ব পালনকালে ওসি প্রণব চৌধুরী মোটা অংকের টাকা ঘুষ না পেয়ে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়ার ওয়ার্ড জামায়াতের সহ-সভাপতি ইমাম হোসেনকে নাশকতার মামলা গ্রেপ্তার করেন।
প্রনব চৌধুরী বলেন, শাহ আমানত সেতু এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাটখোলার একটিবাসা থেকে বেশ কিছু উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও ব্যানার উদ্ধার করা হয়।
কিন্তু ইমাম হোসেনের পরিবারের দাবী, তারা স¤পূর্ন মিথ্যা ঘটনায় ইমাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে কেউ শান্তিতে ঘরে থাকতে পারেনা। কোন না কোন ভাবে তাকে হয়রানী করা হয়।
অসংখ্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকা পরেও ওসি প্রণবকে পুরস্কৃত করা জাতির জন্য দূর্ভাগ্য বিষয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাই এই বিষয়ে একমত হতে পারেননি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সি.এম.পির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেখানে একজন ওসি প্রণব-যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ থাকা স্বত্তে¡ও তাকে পুরষ্কৃত করা হয় এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় জাতির জন্য আর কিছুই হতে পারেনা।” এটা স্থানীয় জনমনেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, ওসি প্রণব জনসেবার পরিবর্তে জন হয়রানিতেই বেশী পারদর্শী। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি থানায় মামলা করতে এলে তাকে অযথা হয়রানি করেন এবং মামলা না নিয়ে ফেরত যেতে বাধ্য করেন এমন অভিযোগ রয়েছে। আবার পর্যাপ্ত টাকা দিলে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। থানা এলাকায় ছিনতাই, মাদক, নারীপাচার, পতিতাবৃত্তি ও চাঁদাবাজী সহ সকল অপরাধীকেই সবুজ বড়–য়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন। কেউ টাকা না দিলে চলে গ্রেপ্তার নাটক। খুলশী থানা এলাকা বর্তমানে এক অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসি এই ব্যপারে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।