ফাঁসি নয়, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড চান শিক্ষার্থীরা

0
554

ফাঁসি নয়, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড চান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিবিরোধী আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করতে এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সাত দফা দাবি দিয়েছেন তারা।

রোববার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান কিছু শিক্ষার্থী।

তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে তারা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা তানজিন। দাবিগুলো হলো-

ধর্ষণ আইন পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ধর্ষকের এবং সীমাভেদে সকল প্রকার যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং ভিকটিমের প্রাণ বিপন্ন করা রুখতে পরিবর্তনযোগ্য লঘু শাস্তির উল্লেখ থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭৫ ধারা অনুসারে উল্লেখিত ধর্ষণের সম্মতির সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে, যাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছেলে, শিশু, পুরুষ, যৌনকর্মী, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষ ও হিজরারাও আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন।

পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও সামাজিক নিপীড়নের অভিযোগে নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণের আওতায় এনে বিচারকার্য করতে হবে।

ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, যাতে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা যা, পূর্ববর্তী সব ধর্ষণ মামলার রায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্পন্ন করতে হবে।

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারার বিলোপ অর্থাৎ জেরা করার সময় যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারক চরিত্র, পেশা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে হেনস্তা না করে। হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের ওপর কোনা প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ প্রয়োগ বা ধর্ষককে আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দেশের প্রতিটি মাদরাসা, স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌনশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ও মিডিয়া এবং সাহিত্য নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন, নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে। সাইবার মাধ্যমে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করতে হবে, যারা স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে অবকাঠামোর কাছে জবাবদিহি করবে। দেশের সব প্রান্তে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চৌধুরী নদী ও তাসফিয়া তারান্নাম রিদিতা, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহিন আহমেদ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাদিয়া আরাফাত সুচিতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 5 =