পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যানার ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে গোটা এলাকা

0
1600

কুয়াকাটা প্রতিনিধি: কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্ভাব্য প্রার্থীর ব্যানার ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে গোটা এলাকা। এদের মধ্যে বিতর্কিত এক ব্যাক্তি যিনি দল বদলের রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। তিনি এবার মেয়র প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীক চেয়ে ব্যানার সাটিয়েছেন। দলের প্রাথমিক সদস্য না হয়েও বঙ্গবন্ধু,প্রধানমন্ত্রী, সজীব ওয়াজেদ জয়,স্থাণীয় সাংসদ,জেলা আ.লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ছবি ব্যাবহার করেছেন। যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে জনমনে।

জানা গেছে,আসন্ন কুয়াকাটা পৌর নির্বাচন ২০২১কে ঘিরে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গাজী মোঃ ইউসুফ আলী,সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার এবং জাতীয় পার্টি থেকে স্ব-ঘোষিত সদ্য আওয়ামী লীগ আনোয়ার হাওলাদার ইতোমধ্যে ব্যানার পোস্টার লাগিয়েছেন। নিজেদের অবস্থান জানাতে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। অপরদিকে বর্তমান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আঃ বারেক মোল্লা নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার আগে ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার লাগাতে আগ্রহী নন। তার মতে হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে দলের হাই কমান্ডের সিদ্দান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।


স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীসহ আমজনতা জানান, আনোয়ার হাওলাদার বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে। যিনি ২০১৫ সালে জাতীয় পার্টির টিকিট নিয়ে কুয়াকাটা পৌর নির্বাচন করেছিলেন। যাতে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তার। ২০১৯ সালে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে একই পার্টির মনোনয়নে সাংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। পরে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান মুহিবকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেন আনোয়ার হাওলাদার। জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে গেলেও আবার তার স্বাদ জেগেছে পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হবার। এ জন্য দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন উপর মহলে। জাতীয় সংসদ নির্বাচণ করার পরে কয়েকধাপ নিচে নেমে আবার পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহনের সিদ্দান্তে স্থানীয়দের মাঝে এ নিয়ে চলছে কানাঘুষা।

কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহজাহান হাওলাদারসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, নামে মাত্র আওয়ামীলীগে যোগ দিলেও দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদ পর্যন্ত পাননি আনোয়ার হাওলাদার। তারপরও কিভাবে এই নির্বাচনে নৌকার টিকিটের আশায় জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্মিলিত ব্যানার টানিয়েছেন তা তাদের বোধগম্য নয়। যে কারনে বিভক্তিসহ বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ছে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগে। এদের দাপটে দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছে কোটঠাসা।

তারা আরো জানান, একাধিক মামলায় আসামী হয়েছে অনেকে ত্যাগী নেতাকর্মী। আসন্ন পৌর নির্বচনকে কেন্দ্র করে এ বিভক্তি আরো বেশি প্রকট হচ্ছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা এসব হাইব্রীডদের নেতিবাচক কর্মকান্ডে বিব্রত মাঠ পর্যায়ের সাধারন কর্মীরা। এখনই সাংগঠনিক উদ্যোগ না নিলে পৌর নির্বাচনসহ স্থানীয় রাজনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এমন শংকা ও দাবী স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

মামলা-হামলার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক দ্বায়িত্বশীল নেতাসহ স্থানীয় সূত্র জানায়, পর্যটন নগরী কুয়াকাটার উন্নয়নে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর জেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়কে বিভক্ত করে কুয়াকাটা পৌরসভা ঘোষনা করেন সরকার। ফলে আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাটি এ এলাকার রাজনীতিতে আসে ভিন্ন রূপ। সুযোগ বুঝে দলে প্রবেশ করে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।

এসব অনুপ্রকেবশকারীদের অনেকেই সরকারী খাস জমির ভূয়া খতিয়ান তৈরি করে বিক্রির সাথে জড়িত। জমির দালাল ও দখলকারী এসব হাইব্রীডরা কালো টাকার মালিকদের টাকা সাদা করে নিজেরাও বনে গেছেন কোটিপতি। এ সব বানিজ্যসহ নিজের অবৈধ কাজের সুরক্ষায় যে ক্ষমতায় তারা সে দলে যোগদান করে।

কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু, আওয়ালীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামীলীগের কঠোর সমালোচনাকারী এসব হাইব্রীডরা এখন জয় বাংলা শ্লোগান দেয়। বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার আহবায়ক দাবী করে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, স্থানীয় সাংসদসহ জেলা নেতৃবৃন্ধের ছবি দিয়ে পোস্টার ব্যানার ছাপায়।

ছাত্রনেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাইব্রীডদের বিরোধীতা করে ছাত্রলীগ সভাপতি মজিবরসহ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউসুব হাওলাদর, দুলাল শিকদার, আবৃুল হোসেন ফরাজী, নিজাম বেপারী, আসাদুজ্জামান কবির, আমির হোসেন, আবুল হোসেন একাধিক মামলার আসামী হয়েছেন।

কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দলে অনুপ্রবেশকারী আনোয়ার হাওলাদার আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করে নির্বাচনী ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এবিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অবগত রয়েছেন বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে আনোয়ার হাওলাদার’র মুঠো ফোনে জানান, ব্যানারে যে নেতাদের ছবি রয়েছেন তাদের কাছে এবিষয়ে কথা বলতে বলেন এ প্রতিনিধিকে। তিনি আরও জানান, জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ মেহমানদের সাথে কুয়াকাটা গ্রান্ড হোটেলে তাদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ভিপি আ. মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তাদের বিষয় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কেউ যদি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদসহ জেলা নেতৃবৃন্দের ছবি দিয়ে পোস্টার ব্যানার করে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − fourteen =