ছদ্মবেশী আওয়ামীলীগ নেতা মাহামুদ হোসেন রিপনের অপকর্ম

0
1460

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে দলবদল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। নীতি আদর্শের কথা ভুলে গিয়ে অতীতে অনেকেই যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলে। এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াটি বর্তমানে অন্য রকম হয়ে গেছে। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নিজ দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেওয়া হচ্ছে তাকে আর দলবদল বলা যায় না। বলা যায় অনুপ্রেবশকারী। আর এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি জামায়ত শিবির ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর গনভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামীলীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জামায়াত-বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে নয়। কিন্তু তার পরেও অনুপ্রবেশ থেমে নেই। নানা প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির থেকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশের পর পদ পদবী বাগিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার ৫ নং শৌলজালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহামুদ হোসেন রিপন অন্যতম। ছাত্রজীবনে বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা ডিগ্রী কলেজের শিবিরের সভাপতি ছিলেন এবং কাঠালিয়া উপজেলা জামায়াতের সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি কখনই মুজিব আদর্শের সৈনিক ছিলেন না। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে মাহামুদ হোসেন রিপনের সৎভাই খায়রুল ইসলাম মান্নান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব-১ নির্বাচিত হন। পাল্টে যায় শৌলজালিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। মাহামুদ হোসেন রিপন এলাকাতে এলেন প্রথমেই এক প্রকার জোড় করে-দখল করে নিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ।

তৎকালীন শৌলজালিয়া ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন আওয়ামীলীগের দু:সময়ের কান্ডারী আব্দুল খালেক যাকে সবাই বাটা খালেক বলে চিনতেন, কোন কাউন্সিল বা সভা না করেই সৎভাইকে দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সরাসরী হয়ে গেলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। রিপন সভাপতি হয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য আওয়ামীলীগের মুলধারার এবং ত্যাগী নেতাদের রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

শুরু হয় অবৈধ মিশন। শালিস বানিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেন নাই। তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তারে বেশ সুনাম রয়েছে তার। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচার শালিসের নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার আরও একটি পরিচয় আছে, তাকে মানুষ টিউওবয়েল চেয়ারম্যান বললে নাম ছাড়াই চিনে ফেলে। কারন শৌলজালিয়া ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সে টিউওবয়েল দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন।

কিন্তু এখনো টিউওবয়েল দিতে পারেনি। রাস্তাঘাটে বা তার অফিসে গিয়ে যদি কেউ তার কাছে পাওনা টাকার তাগাদা দেয়-তিনি তাদের ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তার সৎভাই এপিএস থাকাকালীন অসংখ্য লোকের নিকট থেকে চাকুরীর কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিরোধীতা করে অনেক দিন গাঁঢাকা দিয়ে ছিলেন। ইদানিং তাকে আবার জনসম্মূখে দেখা যায় বিএনপি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে।

শালিস বানিজ্যের ফাঁদে এলাকাবাসী:

কাঠালিয়া উপজেলার ৫নং শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বিনাপানির পূর্ব কৈখালি গ্রামের আব্দুল হাকিম খান গংদের সাথে ফজলে আলী খান গংদের সাথে জমিজমা নিয়ে র্দীঘ দিন যাবৎ বিরোধ চলে। একপর্যায়ে কোর্টে মামলা হয়। মামলায় আব্দুল হাকিম খান তার পক্ষে রায় পায়। রায়ের বিরুদ্ধে ফজলে আলী খান গংরা আপীল করেন। আপীলেও আব্দুল হাকিম খান গংরা রায় পায়। কোর্টের মাধ্যমে আব্দুল হাকিম গংদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারা  এই জমি ভোগ করতে থাকেন। কিন্তু ফজলে আলী খান গংদের সাথে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপনের ভালো সর্ম্পক হওয়ায়-তার পরার্মশে ফজলে আলী খানরা ওই জমিতে আবার বাধাদেয়। চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ হয়েছে এই মর্মে-আব্দুল হাকিম খান গংদের জমি বিগত আট বছর যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদের নামে ভোগ দখল করিতেছে। আব্দুল হাকিম খানরা এব্যাপারে চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করেন। অপরদিকে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম শৌলজালিয়া গ্রামের ফজলুল হক খলিফা তার মায়ের বাড়ী সেন্টারের হাটের খান বাড়ীতে ওয়ারিশ সূত্রে জমি পায়। উক্ত জমিতে গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে ফজলুল হক খলিফার ভাতিজা শাহিন খলিফা ঘরবাড়ী নির্মাণ করেন। শাহিন খলিফা বাড়ীতে নাথাকলে শাহিন খলিফার প্রতিপক্ষ হালিম খান চেয়ারম্যানের সহযোগীতায় তার বাহীনি দিয়ে শাহিন খলিফার ঘরবাড়ী ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী খালে ফেলে দেয়। এভাবে চেয়ারম্যানের বাহীনি তিন তিন বার শাহিন খলিফার ঘর  ভেঙ্গে ফেলে এবং চেয়ারম্যান লোকমারফত শাহিন খলিফার কাছে প্রস্তাব পাঠায় তাকে কিছু টাকা পয়সা দিলে তিনি মীমাংসা করে দিবে। শাহিন খলিফার কাছ থেকে তিনি বেশ কয়েকবার টাকাও নিয়েছেন। আমাদের প্রতিবেদকের কাছে শাহিন খলিফা অভিযোগ করে বলেন, কাগজ পত্র অনুযায়ী জমির মালিক আমরা কেন চেয়ারম্যান আমাদের কে বারে বারে হয়রানী করছে। প্রিয় পাঠক এখানে উল্লেখ থাকে যে রক্ষক এখানে ভক্ষক এর ভ‚মিকায় অবর্তীন হয়েছে।

সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরনের টাকা আত্মসাৎ:

বিগত ২০১৪ সালের ২১ডিসেম্বর সকালে শৌলজালিয়া খেয়াঘাট সড়কে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় শৌলজালিয়ার মাঝগ্রামের আব্দুল আজিজ নিহত হয়। এঘটনায় চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেন রিপন শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের চালক অচিন্ত্যকে ২ লাখ ও মোটরসাইকেলের মালিক কামালকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরন বাবদ জরিমানা করেন। কিন্তু সেই ক্ষতিপুরনের টাকা চেয়ারম্যান রিপন আদায় করে আজিজের পরিবারকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন।

এব্যাপারে আব্দুল আজিজের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরনের টাকার জন্য অনেক দিন চেয়ারম্যানের পেছনে ঘুরেছি, ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত। টাকা পয়সার কথা বললে চেয়ারম্যান উল্টো হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

মৃত ব্যক্তির জানাযা নামাজে দাড়িয়ে ওয়াদা করেও টাকা ফেরত দেননি রিপন চেয়ারম্যান:

শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শাহজাহান মোল্লার নিকট থেকে প্রতারণা করে ৩ লাখ হাতিয়ে নেন রিপন চেয়ারম্যান। টাকা চাইতে চাইতে শাহজাহান মোল্লা মৃত্যুবরন করেন। তার জানাযায় উপস্থিত হন রিপন চেয়ারম্যান। জানাযা নামাজের পূর্বে তার দেনা পাওনার ব্যাপারে কথা উঠলে রিপন চেয়ারম্যানের নিকট পাওনা ৩ লাখ টাকার কথা স্বীকার করে রিপন চেয়ারম্যান ওয়াদা করে খুব দ্রæত শাহজাহান মোল্লার পরিবারের কাছে উক্ত টাকা ফেরত দিবেন। কিন্তু অদ্যবদি উক্ত টাকা ফেরত দেননি রিপন চেয়ারম্যান।

টিউবওয়েল দেয়ার নামে সংখ্যালঘু পরিবারের টাকা আত্মসাৎ:

শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ধোঁপা বাড়ীতে সরকারী টিউবওয়েল বসানোর কথা বলে ঘুষ বাবদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় রিপন চেয়ারম্যান। কিন্তু অদ্যবদি ঐ বাড়ীতে টিউবওয়েল বসাতে পারেনি। গত ৪ বছর যাবৎ টিউবওয়েলর জন্য রিপন চেয়ারম্যানের নিকট ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভুগি পরিবারটি। এব্যাপারে হিন্দু পরিবারটি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলে চেয়ারম্যান রিপন ৭নং ওয়ার্ডে মেম্বার সামছুল আলমকে পাঠিয়ে ঐ পরিবারটিকে হুমকি ধামকি দিয়ে বলে যায়, চেয়ারম্যানের নামে অভিযোগ করেছ, তাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা  আর পাবেনা আজ থেকে সর্ব প্রকার ত্রান থেকে তোমাদের বঞ্চিত করা হলো। চেয়ারম্যান ঠিক তাই করেছে করোনা   কালিন দীর্ঘ লক-ডাউনে উক্ত হিন্দু পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা করা হয় নাই।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শৌলজালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ৬০/৭০টি পরিবারকে টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে টিউবওয়েল প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মাহামুদ হোসেন রিপন চেয়ারম্যান। কিন্তু এখনো টিউবওয়েল দিতে পারেন নাই। এটি হচ্ছে শুধু একটি ওয়ার্ডের চিত্র। এজন্য এলাকায় তিনি টিউবওয়েল চেয়ারম্যান হিসেবে সমালোচিত।

এব্যাপারে মাহামুদ হোসেন রিপনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কারন হিসেবে এক ভুক্তভোগি বলেন, মাহামুদ হোসেন রিপনের অনেক পাওনাদার রয়েছে। এজন্য তিনি বিভিন্ন নাম্বারের সিম কার্ড ব্যবহার করেন। চলবে….

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 3 =