প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ইং এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চুড়ান্ত নিয়োগ থেকে বঞ্চিত চাকুরী প্রার্থী সবাইকে নিয়োগদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনায় প্যানেল প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১৮ অক্টোবর, ২০২০ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ৯.০০ ঘটিকা হতে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত । শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অবস্থানকারীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশাস ছাড়া ঘরে ফিরবে না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
প্রাথমিক শিক্ষা হলো দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খাত। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, শিক্ষক সংকটের ভয়াবহতাকে আলিঙ্গন করেই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করতে হচ্ছে। যা শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হতে বাঁধার প্রধান কারণ। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও বঞ্চিত চাকরি প্রত্যাশীদের সবাইকে কোভিড-১৯ এর দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্থ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যেন সার্কেল প্যানেল করে অবিলম্বে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এই দাবি পূরণ হলে ভবিষ্যৎ কর্ণধার কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার মান যথাযথভাবে রক্ষা পাবে এবং বেকাররাও জীবিকার সুযোগ পেয়ে দেশে কার্যকরী সম্পদ হয়ে ভূমিকা রাখতে পারবে। তারা মুজিব শতবার্ষিকীতে এ বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, “মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না।
তারা সেই ঘোষণাটির বাস্তবায়ন চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা পরবর্তী আমাদের এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাইতো শিক্ষার শিকড়ে হাত দিয়ে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন ১৯৭৩ সালে, যেখানে প্রায় দেড় লাখের অধিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ী হয়েছিল। এটা ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তার আদর্শ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আকুতি ও জোরালো দাবি, তার পিতার মত যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে প্রায় ৩০ হাজার মেধাবী বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।
প্যানেল প্রত্যাশী কমিটি জানুয়ারি, ২০২০ হতে রাজপথ থেকে শুরু করে অনলাইন, বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ১৭ অক্টোবর সারাদেশের প্যানেল প্রত্যাশীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেন।বি: দ্র: চলমান শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি মিডিয়া কাভারেজ করার জন্য ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়াকে আহবান জানাচ্ছি।
কর্মসূচি সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
১) ৯ ফেব্রুয়ারি,২০২০ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশীরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
২) ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
৩) ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ একযোগে ৬১ জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
৪) ৩ মার্চ থেকে ৭ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত প্যানেল প্রত্যাশীগণ প্রেসক্লাবে প্যানেলে নিয়োগের ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
৫) সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্যানেলের পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছেন। শিক্ষক নেতা বজলুর রহমান স্যার বলেছেন- “বতর্মান সময়ে উপযোগে প্রাথমিকে প্যানেল একান্তই প্রয়োজন”। নজরুল ইসলাম খান (এন আই খান) স্যার বলেছেন- “প্যানেলের বিপক্ষে কোনো আইনি জটিলতা না থাকায় প্রাথমিকে প্যানেল প্রয়োজন।”
৬) করোনার মধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অনলাইনে নিয়মিত পাঠদান পরিচালনা করে যাচ্ছে।
৭) করোনা প্রকোপের মধ্যেও প্যানেল প্রত্যাশীরা অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ধানকাটা, ডেঙ্গু ও মশক নিধন, অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই ও খাদ্য বিতরণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি কর্মসূচি অন্যতম। ২০১৮ প্রাথমিক প্যানেল নিয়োগদানের পক্ষে ১৫০’র অধিক ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি ডিও লেটারের মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন।
প্রাথমিকে রীট জটিলতার কারণে ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তি হয়নি। তারা ছয় বছরে (২০১৪-২০২০ পর্যন্ত) মাত্র একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রাথমিকে উত্তীর্ণ অধিকাংশের সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়ায় এটি তাদের সর্বশেষ সুযোগ ছিলো।
৮) ১৪ অক্টোবর, ২০২০ বুধবারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালনসহ ১৫০ এর উপর মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশপত্র ও প্যানেলের যৌক্তিক কারনগুলো উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়।
প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তনের যৌক্তিকতার কারণসমূহ হলোঃ
১) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৮ হাজার প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সেক্ষেত্রে ১৮ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
২) ১৬ই জুন ২০১৬, ডি পি ও এর দেয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ জন শিক্ষক অবসরে যান। অথচ সে হারে এর বিপরীতে নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না।
৩) ‘বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স-২০১৯’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র একজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে দেশের ৭৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাত্র দু’জন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে দেশের ১১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাত্র তিনজন শিক্ষক দ্বারা চলছে দেশের ৪০০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার ফলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
৪) একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর লেগে যায়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শূন্যপদ পূরণের চেয়ে পূর্বের থেকে আরো বেশি পদ শূন্যই রয়ে যায়।
৫) এছাড়াও যেহেতু সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫ হাজার শিক্ষক পদোন্নতি হলে ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হবে।
৬) করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় ২০১৭ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে হতে বাদ পড়া ৫০৫৪ জন নার্সকে এবং ৩৯ তম বিসিএস হতে ২০০০জন নন ক্যাডার ডাক্তার প্যানেল করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে শিক্ষক সংকটের এই ক্রান্তিকালে ৩৭ হাজার ১৪৮ জন প্রার্থীকে প্যানেলে নিয়োগ প্রদান করাই যৌক্তিক।
৭) দেশে বিসিএস, স্বাস্থ্যখাত, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা সেক্টরে প্যানেল পদ্ধতি চালু আছে।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ এর নিয়োগ পরীক্ষায় ৬১ জেলা হতে প্রায় ২৪ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন প্রার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর মাত্র ২.৩%। এতে নিঃসংকোচে বলা যায় যে, এখানে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মেধাবী যোগ্য প্রার্থীদেরকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। প্যানেল প্রত্যাশীদের যোগ্যতা নিয়ে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে শূন্যপদের ভিত্তিতে সার্কেল প্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ চায় প্যানেল প্রত্যাশীরা।