ইসলামী শরিয়াহ আইন কি? ইসলামী শরিয়াহ আইন ও গণতান্ত্রিক আইন এক নাকি ভিন্ন?

0
553

শরিয়াহ হল এমন একটি আইন যা এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে। এটি কোন মনুষ্য প্রবর্তিত আইন নয়। তাই শরিয়াহকে বলা হয় ডিভাইন ল (Divine Law)। তবে বিভিন্ন সময় মনুষ্য প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এই আইনটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। শরিয়াহ আইনকে বোঝার জন্য সর্বপ্রথম শরিয়াহ ও ফিক্বহের পার্থক্য জানা জরুরী। কোরআন ও সুন্নাহতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) পক্ষ থেকে যে সকল হুকুম আহকাম এসেছে তা হল শরিয়াহ। আর মানুষ শরিয়াহকে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি অনুযায়ী যেভাবে উপলব্ধি করে সেটা হল ফিক্বহ। অর্থাৎ মানুষ যখন শরিয়াহকে প্রণয়ন করতে গিয়ে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটায় তখন তাকে ফিক্বহ বলে। এভাবেই শরিয়াহ ও ফিক্বহের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইসলামী শরিয়াহ আইন। এর প্রধান উৎস কোরআন ও সুন্নাহ এবং ফক্বিহগণের ইজতিহাদের মধ্য দিয়ে এটি সম্প্রসারণ লাভ করেছে।

ইসলামী শরিয়াহ আইনে মানুষের হস্তক্ষেপ অবশ্যই আছে, তবে তা কখনোই কোরআন ও সুন্নাহর মূলনীতিগুলোকে অতিক্রম করতে পারবে না। শরিয়াহ বা ডিভাইন ল অপরিবর্তনীয়, কেননা কোরআন ও সুন্নাহ চিরন্তনভাবে অপরিবর্তনীয়। ইজতিহাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলেমগণের মতবিরোধ থাকতে পারে কিংবা সময় ও পরিস্থিতিভেদে ইজতিহাদে ভিন্নতা আসতে পারে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে তা শরিয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন, আপনার বাড়িতে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। আপনি ভাবছেন মেহমানদের কি ড্রিংকস দিয়ে আপ্যায়ন করা যেতে পারে। তখন আপনি বিভিন্ন ড্রিংকসের নাম চিন্তা করা শুরু করলেন – ওয়াইন, শ্যাম্পেইন, হুইস্কি, বিয়ার, ভদকা, রাম ইত্যাদি। কিন্তু প্রথমেই আপনার মনে হল সব ধরণের মদ কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চিরতরে হারাম। ফলে মদ পরিবেশন করার ব্যাপারে আপনার চয়েস করার কোন সুযোগই নেই। এগুলো বাদ দিয়ে যদি অন্য কোন পানীয় পরিবেশন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে চয়েস করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আপনি এখন আপনার ইচ্ছামত কোক, ফ্যানটা, স্প্রাইট, লেবুর শরবত, লাচ্ছি, রুহ আফজা এগুলোর মধ্য থেকে যেকোনোটিকে মেহমানদের আপ্যায়ন করার জন্য পছন্দ করতে পারেন।

গণতান্ত্রিক আইন একটি মনুষ্য প্রবর্তিত আইন। গণতান্ত্রিক আইনের প্রবর্তন, পরিবর্তন ও প্রয়োগ সম্পূর্ণরূপে মানুষের নিজস্ব ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। যদিও গণতান্ত্রিক আইন কিছু সাংবিধানিক মূলনীতি অনুসরণ করে, তবে সেই মূলনীতিগুলোকেও যেকোনো সময় পরিবর্তন করা সম্ভব। গণতান্ত্রিক আইনের পেছনে রয়েছে একটি ফিলসফি যেখানে বিশ্বাস করা হয় আমাদের পরিচিত এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের বাইরে কোন জগৎ নেই। অতএব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পৃথিবীতেই অবস্থিত, সৃষ্টিকর্তার হাতে নয়। ফলে মানুষই রাষ্ট্রের মালিক এবং মানুষই রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নকারী। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের মালিক এবং তাঁর আইনই সর্বোচ্চ আইন। ফলে গঠনগত, দর্শনগত, মূলনীতিগত ইত্যাদি আরো অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ইসলামী শরিয়াহ আইন ও গণতান্ত্রিক আইন এক ও অভিন্ন নয় বরং পুরোপুরি বিপরীত। উপরন্তু, আল্লাহ যা কিছু হালাল করেছেন গণতান্ত্রিক আইন তা হারাম করে দিতে পারে এবং যা তিনি হারাম করেছেন তা গণতান্ত্রিক আইন হালাল করে দিতে পারে। আর আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করা হচ্ছে শিরক। ফলে এই দুটি আইন একে অপরের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 − one =