দুদক ও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি বেপরোয়া অগ্রণীর এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম

0
944

মো: আবদুল আলীম: অনিয়ম দুর্নীতির আবর্তে ঘুড়পাক খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। অগ্রণী ব্যাংক দুর্নীতিতে বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দলীয় লেবাস ধারন করায় এমডি শামস-উল ইসলামকে পুণরায়  নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে তিনি বর্তমানে দুদক আদালত কিছুই মানছেন না। তথ্য অধিকার আইনও মানছেন না। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এমডি সাহেব ছলে বলে কৌশলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লেবাস লাগিয়েছেন। দলীয় লেবাসটিকে কাজে লাগিয়ে  প্রশাসনকে পাত্তা দিেেচ্ছন না। অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম, পুরানা পল্টন শাখা, ঢাকা এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে ডিএমপির পল্টন থানায় মামলা নং ২১ তারিখ ১৫-০৫-২০১৬ খ্রি দন্ডবিধির ৪০৬/৪১৯/৪২০/১০৯/৩৪ ধারায় রজু করা হয়। পরবর্তীতে প্রকাশ পায় মামলাটি ছিল উদ্দেশ্যশূলক। উক্ত মামলা দুদকের তফশীলভুক্ত হওয়ায় থানা তা দুদকে প্রেরণ করে। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে মামলা রজু করেন সুকান্তি বিকাশ স্যানাল (বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক থেকে অবসর)। মামলা তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় এমআর গেøাবাল কর্তৃপক্ষ লি: ও ইউরো পটেটো ফ্লেক্স লি: এর চেয়ারম্যান কর্তৃক ইস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড নামক প্রতিষ্টানের নিকট হতে একটি জাহাজ ক্রয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃক অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলায় বর্ণিত আসামীদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপরের রুপ ধারন করে এবং নাম পরিবর্তন করে হিসাব খুলে অপরাধজনক বিশ্বাস ভংগ করে অর্থ আত্মসাতের অপরাধে সুকান্তি বিকাশ স্যানাল,

উপ মহাব্যবস্থাপাক ও শাখা প্রধান, অগ্রণী ব্যাংক, পুরাণা কর্পোরেট শাখা, ঢাকা কর্তৃক আলোচ্য মামলা রজু করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে মামলার বাদি সুকান্তি বিকাশ সানাল মহাব্যবস্থাপক (পিসিএমডি), অগ্রণী ব্যাংক লি:, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা ২৬/১২/২০১৮ লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে দেখা যায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ভিজিলেন্স ডিভিশন (এমডি স্কোয়াড) এর ০৩-১২-২০১৫ ইং তারিখের প্রতিবেদনে ওয়েস্টার্ন শিপইয়ার্ড লি: এর নামে ১৯-৫-১৪ ইং চলতি হিসাব নং ০২০০০০২৭৪৪৩৫৮ খুলে ট্রাস্ট ব্যাংক লি: দিলকুশা কর্পোরেট শাখা ঢাকার একটি এলসি নম্বর ২৩৫৯১৪৯৯০০০৩ তারিখ ২২-৫-২০১৫ এর বিপরিতে বিল কালেকশন করে পরস্পর যোগসাজশে ১৯, ৯৯, ৮৬৭৯৫/-

টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ভ্রমাত্মক প্রতিবেদনের কারনে তিনি উক্ত মামলা দায়ের করেন। দুদকের তদন্তে দেখা যায় উক্ত নামে হিসাব খোলা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকে উক্ত এলসির বিপরিতে বিল কালেকশন সংক্রান্ত ব্যপারে অগ্রণী ব্যাংকের কোন অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। বরং অগ্রণী ব্যাংক ফি কমিশন ও ভ্যাট বাবত ১৩, ২৭, ৫৭৮ টাকা আয় করেছে। তাছাড়া ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লি: এর নামে অগ্রণী ব্যাংক হতে কোন ধরনের গ্যারান্টি/চুক্তিপত্র প্রদান করা হয় নাই এবং ব্যাংকের কোন দায় দেনা সৃষ্টি হয়নি। ট্রাস্ট ব্যাংকেরও উক্ত এলসির বিপরিতে কোন দায় দেনা নেই ।

দুদকের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত কর্তৃক স্বাক্ষরিত পত্র স্বারক নং০৪.০১.২৬০০.৬০৩.০২.১২০১৬. ৩৮৪২৭ তারিখ ০৬-১০-১৯ থেকে জানা যায় ভ‚ল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল এবং ভ‚ল তথ্যের ভিত্তিতে মামলা রজু করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন করাসহ অফিস শৃঙ্খলার পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদকের উক্ত পত্রের কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক উক্ত ঘটনার জন্য দায়ি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অগ্রণী ব্যাংক চাকুরি প্রবিধানমালা ২০০৮ মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনপূর্বক তার ফলাফল দুদককে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ঘটনার সাথে জড়িত (১) সুকান্ত বিকাশ স্যানাল, উপ-মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান, বর্তমান মহাব্যবস্থাপাক (পিসিএমডি),

(২) মো: ওহিদুজ্জামান সাবেক উপ মহাব্যবস্থাপক, ভিজিলেন্স ডিভিশন (এসডি’স স্কোয়াড) পরবর্তিতে জিএম, (৩) খায়রুল আলম, সাবেক এসপিও পরবর্তিতে এজিএম ভিজিলেন্স ডিভিশন (এমডি’স স্কোয়াড), প্রধান কার্যালয়, ঢাকাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক থেকে অভিযোগ নামার একটি নমুনা ও অভিযোগ বিবরনী প্রেরন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এমডি মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম দুদকের নির্দেশ অমান্য করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে জিএম সুকান্ত বিকাশ স্যানাল ও জিএম ওহিদুজ্জামানকে তড়িঘড়ি করে অবসরজনিত ভাতা প্রদান করে অবসরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন।

অর্থাৎ দুদকের নির্দেশ তিনি কৌশলে অমান্য করলেন। এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম এস এম বাবুল ইসলামকে জিএম পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ থাকা সত্যেও তাকে পদোন্নতি না দিয়ে তার কণিষ্ঠদের জিএম পদে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বরং বাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে একদিকে তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা ও অপরদিকে ব্যাংক লাখ লাখ টাকা গচ্চা দেয় বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। আদালতের নির্দেশও অমান্য করছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি তথ্য কমিশন আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। এর পেছনে রয়েছে ক্ষমাতাসীন দলের প্রভাব।

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী অগ্রণী ব্যাংকে তথ্যের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনের বিষয় ছিল প্রাণ আরএফএল গ্রæপের নামে  অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋন সংক্রান্ত তথ্য। আরও ছিল হোটেল লা মেরিডিয়ানের কাছ থেকে অগ্রণী ব্যাংক কত কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে এবং ১০ টাকার শেয়ারে কত টাকা হিসেবে প্রিমিয়াম পরিশোধ করেছে। এসব বিষয়ে তথ্যের জন্য আবেদন করে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ হোটেল লা মেরিডিয়ানের কাছে অগ্রণী ব্যাংক যে বিনিয়োগ করেছে তা নিয়ে ব্যপক অনিয়ম আছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপর খেলাপি ঋন রয়েছে।

এ ব্যপারে একটি উদাহারণ দেওয়া যেতে পারে। বহুল আলোচিত অগ্রণী ব্যাংকের রংপুর সার্কেলের নীলফামারী শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠান শাওন অটো ব্রিক্স লি: এর নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে যন্ত্রপাতি আমদনির নামে মার্কিন ডলার ১৫,৫২,৬১১ বিদেশে পাচারসহ পোর্ট ডিমারেজ বাবদ সরকারের ১২ কোটি টাকার ওপর রাজস্ব ক্ষতির কোন সুরাহা অদ্য পর্যন্ত হয়নি বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। অপরাধ বিচিত্রায় এই নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি দুদক পর্যন্ত গড়ায়। দুদকের সমম্বিত জেলা কার্যালয় রংপুর এর সহকারী পরিচালক

মো: জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত স্মারক নং ০০.০১.৮৫০০.৭২৫.০১.০৩৬.১৮.১৮৩৭ (২) তারিখ ১৯-১২-২০১৯ খ্রি: এর মাধ্যমে জড়িত মো: মনোয়ার হোসেন, হেড অব আইসিসি, অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এবং সুকানিত বিকাশ স্যানাল, সাবেক জিএম, অগ্রণী ব্যাংক রংপুর সার্কেলকে বক্তব্য প্রদান করার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশের কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। অগ্রণী ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে নোটিশ পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রচুর দেন দরবার করে দুদককে ম্যানেজ করা হয়।

এসব ব্যপারে অগ্রণী ব্যাংক লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য মুঠাফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে প্রতিবারই তিন ব্যস্ত আছেন বলে এড়িয়ে যান। অবশেষে অপরাধ বিচিত্রা থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর রেজিস্টার্ড এডি ডাকযোগে পত্র প্রেরন করে বক্তব্য চাওয়া হয়। উক্ত পত্র ব্যাংক গ্রহণ করেছে মর্মে এডি কার্ড ফেরত আসে অথচ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অগ্রণী ব্যাংকের বিশালাকারের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। কিছু অসৎ গ্রাহকের সাথে ব্যাংকটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সখ্যতা রয়েছে যার কারণে খেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনক হারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে। এ ব্যপারে এ প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি পর্বে প্রকাশিত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seven − five =