রায়হান হত্যা : এএসআই আশেক ও কনস্টেবল হারুন রিমান্ডে

0
540

সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির প্রত্যাহারকৃত এএসআই আশেক এলাহিকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। একই সঙ্গে আলোচিত এই মামলার অন্যতম আসামি কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে আরও তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য ভূষণ চৌধুরী জানান, বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালতে তাদের হাজির করে পিবিআই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম প্রত্যাহারকৃত এএসআই আশেক এলাহির সাতদিনের ও সাময়িক বরখাস্ত কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানান। আদালত আবেদন দুটির শুনানি শেষে আশেকের পাঁচদিন ও হারুনের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বুধবার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সিলেট পুলিশ লাইন্স থেকে প্রত্যাহারকৃত এএসআই আশেক এলাহিকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম। এছাড়াও হারুনুর রশিদকে গত ২৪ অক্টোবর পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। বৃহস্পতিবার পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে আরও পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে দুই দফায় আটদিনের রিমান্ড শেষে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।

এ ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রোববার (২৫ অক্টোবর) কনস্টেবল টিটুকে ফের তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহি, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।

এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি হতে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 + 16 =