পঞ্চগড়ে প্রকাশ্যে চলছে তালমা নদী দখল

0
529

পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড় জেলা শহরের উপকন্ঠে প্রবাহমান তালমা নদী দখল চলছে। গত কয়েকদিন ধরে শত শত ট্রলি দিয়ে বালু ফেলে নদীটিকে দখল করছে সৌদি বাংলা এনভায়রনমেন্ট এন্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি কম্পানী। এর আগে পাশের হিমালয় বিনোদন পার্ক নামের একটি ব্যাক্তি মালিকানাধীন পার্ক নদীটির অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে। ফলে নদীটি প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় প্রবাহমান। নদীটি অচিরেই বিলীন হয়ে যাবার শংকা দেখা দিয়েছে। নদীটি বিলীন হলে পরিবেশ এবং কৃষি অর্থনিতীর উপর বিরাট প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের পঞ্চগড় জেলার নদ-নদী, খাল বিল ও জলাশয় জলাধার ভিত্তিক অবৈধ দখলদারদের তালিকা অনুসারে সৌদি বাংলা এনভায়রন মেন্ট এন্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড প্রায় সাড়ে ৭ একর নদীর জমি দখল করেছে । বর্তমানে তারা নদীর প্রবাহমান ধারায় বালি ফেলছে। অন্যদিকে হিমালয় বিনোদন পার্ক প্রায় সাড়ে আট একর জমি দখল করেছে।
সরেজমিন জানাগেছে গত কয়েকদিন থেকে জালাসী এলাকার আব্দুর রহিম বিন্দুর কাছে বালি কিনে নদীতে ফেলছিলো সৌদি বাংলা এনভায়রন মেন্ট এন্ড ইকো ফ্রেন্ড লিমিটেড। বিন্দু জানান, ওই কম্পানী আমাদের কাছ থেকে বালি কিনে নিচ্ছে । কম্পানীর একজন ম্যানেজার ছিলো । তিনি বাড়ি চলে গেছেন। এসময় কম্পানীর কাওকেই পাওয়া যায়নি।


তালমা নদীর ওই এলাকায় এলজিইডি একটি রাবার ড্যাম্প স্থাপন করেছে। এই ড্যাম্পের মাধ্যমে খরা মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন আবাদে কেনাল সেচের মাধ্যমে পানি দেয়া হয়। স্থানীয় কৃষকরা জানান নদী ভরাট করার ফলে পানিশুন্য হয়ে পড়েছে তালমা। ফলে চাষাবাদ নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বামন পাড়া এলাকার খতিবুল ইসলাম জানান, অনেকদিন থেকেই প্রশাসনের নাকের ডগায় তালমা দখল হয়ে যাচ্ছে। নদীটি মরে গেলে এলাকায় কোন প্রকার কৃষি হবেনা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলা কমিটির সভাপতি একেএম আনোয়ারুল খায়ের জানান, প্রকাশ্যে তালমা নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমরা আন্দোলনে যাবো।
এ দিকে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম এবং সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আক্কাস আলী ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, নদীর চলমান প্রবাহ বালি ফেলে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা নদী ভরাটের কাজ বন্ধ করেছি। একটি তদন্ত রিপোর্ট তৈরীর কাজ চলছে । অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


উল্লেখ্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন নদী খাল বিলের দখলদার হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুৃলিয়া উপজেলায় ১৭ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সদর উপজেলায় ৯২ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ২২ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − ten =