ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজ আহমদের একটি শেয়ার!

0
482

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! মাত্র একটি শেয়ার ধারণ করে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আজিজ আহমদ। শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে এমনই ঘটেছে পুঁজিবাজারভুক্ত সাধারণ বীমাখাতের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বেলায়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর এরকম নানান অনিয়ম ঘটিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান খ্যাত ডানকান ব্রাদার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো এবং সততার দোহাই দিয়ে সাধু-সন্ন্যাসীর অবয়বে বাকি ব্যবসা, অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্স, রাজস্ব ফাঁকি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনে ব্যত্যয় নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেন দেখভালের কেউ নেই, এমনকি বলারও কেউ না থাকায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটাচ্ছে বীমা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা আইডিআরএর চোখের সামনে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের ৮ সদস্যর মধ্যে ২ জন স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত বাকি ৬ পরিচালকের পাঁচজনই ৫ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এরা হলেন, ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের পক্ষে প্রফেসর ডা. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের শেয়ারধারণ ১০ শতাংশ বা ৪৪ কোটি ৫০হাজার, ন্যাশনাল ব্রোকার্স লিমিটেডের পক্ষে এম. সাইফুল ইসলামের শেয়ারধারণ ৬.৬৭ শতাংশ বা ২৯ কোটি ৬৬ লাখ ৬২৫টি, আলীনগর টি কোম্পানির পক্ষে মিসেস সামা রুখ আলমের শেয়ারধারণ ৫.৮৩ শতাংশ বা ২৫ কোটি ৯৫ লাখ ৭৬৪টি, ম্যাকাম বাংলাদেশ ট্রাস্টের পক্ষে দাউদ খান পন্নির শেয়ারধারণ ১০ শতাংশ বা ৪৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৩১টি এবং আমু টি কোম্পানির পক্ষে এম. শাহ আলমের শেয়ারধারণ ৭.৬০ শতাংশ বা ৩৩ কোটি ৮০ লাখ ২২০টি। শুধু পর্ষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজ আহমেদের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব দেখানো হয়নি। ২ শতাংশ শর্তপূরণ না করে মাত্র একটি শেয়ারধারণ করে তিনি পাবলিক শেয়ারহোল্ডার হিসেবে অবৈধভাবে পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত আছেন দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ। এতে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডই হয়েছে অবৈধ।

অথচ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গত ২১ মে ২০১৯ তারিখের প্রজ্ঞাপন BSEC/CMRRCD/2009-193/217/Admin/90-এর ৪নং শর্তানুযায়ী, প্রতিটি তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণ বাধ্যতামূলক। অন্যথায় স্বাভাবিকভাবেই তার পরিচালক পদ শূন্য হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির এসব অনিয়মের লিখিত জবাব চেয়ে কিছুদিন পূর্বে কোম্পানিতে চিঠি পাঠায় এক বিনিয়োগকারী। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিঠির উত্তর দেয়নি ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

ইমরান হাসান, কোম্পানি সচিব

বিষয়টি জানতে কোম্পানি সচিব ইমরান হাসানকে ফোন করে এ প্রতিবেদক। চেয়ারম্যানের একটি মাত্র শেয়ার রয়েছে এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তিনি (চেয়ারম্যান) ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।’ অথচ বার্ষিক প্রতিবেদনের প্রফেসর ডা. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দেখানো হয়েছে। বরং চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজ আহমেদকে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের পাবলিক সাবস্ক্রাইবার প্রতিনিধি দেখিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। একই ব্যক্তিকে একাধারে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি, আবার পাবলিক সাবস্ক্রাইবার দেখানো আইনের লঙ্ঘন। আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে ভোটিং ক্ষমতাসম্পন্ন শুধু একজন প্রতিনিধি থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে যেহেতু প্রফেসর ডা. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দেখানো হয়েছে, তাই আইন অনুযায়ী, স্বাভাবিকভাবেই সৈয়দ আজিজ আহমদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য হবে, এটাই নিয়ম।

এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব ইমরান হাসান জানান, ‘ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী একই প্রতিষ্ঠানের দুইজন প্রতিনিধি পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন।’ বিষয়টি অনুসন্ধানে সংঘবিধি ও সংঘস্মারক দেখতে চাইলে তিনি লিখিত আবেদন করতে বলেন। কিন্তু আবেদনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ প্রতিবেদককে উক্ত ডকুমেন্টগুলো সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন তিনি।

অন্যদিকে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের প্রস্তুতকৃত সামগ্রিক প্রতিবেদন নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কেননা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন-২০১৫ প্রজ্ঞাপনের ২০ (১)নং শর্তানুযায়ী, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং (২)নং শর্তানুযায়ী বার্ষিক প্রতিবেদন কোম্পানি চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হয়। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, যেখানে চেয়ারম্যান নিজেই নিয়ম-বহির্ভূতভাবে পদে অধিষ্ঠিত সেখানে তার স্বাক্ষরিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে তাদের মাঝে হতাশা ও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় অচিরেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো বর্তমান চেয়ারম্যানের অপসারণসহ আইন পরিপালনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − 10 =