আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার স্থান সব কিছুর ঊর্ধ্বে

0
579

তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হয়ে ওঠে তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, ভাই, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দায় পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাড়িঘর, যা তোমরা পছন্দ করো, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর নির্দেশ (যুদ্ধের আদেশ) আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেন না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ২৪)


তাফসির : আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, অর্থ-সম্পদ, ঘরবাড়ি, জায়গাজমি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য-সবই আল্লাহর নিয়ামত। তাই এগুলো যেন আল্লাহর হুকুম পালনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। একজন খাঁটি মুমিনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুমকে সব সময় প্রাধান্য দিতে হবে। হিজরতের আদেশ হওয়ার পর যাঁরা হিজরত করতে ব্যর্থ হন তাঁদের উদ্দেশে এই আয়াতটি নাজিল হয়। তবে এই বিধান সব যুগের সব মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে আল্লাহর রাসুল পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলল, এর জন্য আমি তেমন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি; তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি। এবার হুজুর (সা.) বললেন, তুমি যাঁকে ভালোবাসো কিয়ামত দিবসে তুমি তাঁর সঙ্গেই থাকবে।’ (বুখারি ২/৯১১)


প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে নবীপ্রেম থাকা ইমানের দাবি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।’ (বুখারি : হা. ১৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।’ (বুখারি : হা. ১৪)


সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে মহান আল্লাহকে। আর আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, “বলে দাও, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।” (সুরা আলে ইমরান : ৩১)


এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণকে শর্ত করা হয়েছে। সুতরাং রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সব বস্তুর চেয়ে অধিক মহব্বত।


নবীপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাহাবায়ে কেরামের জীবন। রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সা.)-এর প্রতি যে ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে তা কেবল বিস্ময়করই নয়, নজিরবিহীনও। তাঁর একটু সান্নিধ্য-পরশ পাওয়ার জন্য তাঁরা সর্বদা অধীর আগ্রহী ও ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। তাঁর ইশারায় তাঁরা মুহূর্তেই প্রাণ উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন। আমাদের উচিত সাহাবায়ে কেরামের মতো মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 3 =