আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ একজন অধ্যক্ষ নাকি ভূমিদস্যু?

0
514

রংপুর প্রতনিধিঃ বাহিরে ফিট ফাট, ভিতরে সদর ঘাট। প্রবাদটি নিছকই প্রবাদেই শেষ নয়। আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলামকে মেলানো হলে প্রবাদটির সত্যতা স্পষ্ট। একজন অধ্যক্ষের বাহিরের চেহারায় যা যা থাকা দরকার মোঃ শফিকুল ইসলামের মধ্যে তার প্রায় সবই আছে। নেই শুধু কর্মকান্ডে। পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন সু-শিক্ষা নিশ্চিত করা, মহানুভবতার আদর্শের শিক্ষাকে দৃশ্যমান করা, শিক্ষার্থীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে শিখানো হয় তখন অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলাম নিজেই উপস্থিত থেকে অন্যের জমিকে কলেজের জমি দাবি করে দোকান ঘর লুট-পাট ও ভাংচুর কিভাবে চালাতে পারেন? একজন শিক্ষকের এ ধরনের উগ্র মনোভাব কতটুকু সমীচিন?

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিম ষ্টোরের মালিক মোঃ চান মিয়া অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, আমার জমিতে আমার দোকান ঘর। অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলাম কোন অধিকারে দখল করতে এসে সব মালামাল লুট-পাট করে দোকান ঘর ভাংচুর করে দিয়ে গেল। আমার এতবড় ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবো! অপরাধ বিচিত্রার প্রশ্নের উত্তরে চান মিয়া আরও বলেন, আমার লুট করা মালামালের মধ্যে (১) ষ্টার শিপ পাউডার ১ কেজি প্যাকেট ২কার্টুন, (২) ষ্টার শিপ পাউডার ৪০০ গ্রাম প্যাকেট ১৫ কার্টুন, (৩) ষ্টার শিপ কনডেন্স মিল্ক ২ কার্টুন সহ মোট মালামালের মূল্য ৮০,০০০ হাজারের বেশি।

এছাড়া দোকান পাট ভাংচুর করে আরও অনেক ক্ষতি করা হয়েছে যা অধ্যক্ষ উপস্তিত থেকে সকাল ৭.০০টার আগে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে করিয়েছেন। এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ বাচ্চা মিয়া অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, এখন শীত পড়ায় এতো সকাল বেলায় বাজার প্রায় সম্পুর্ন ফাঁকা ছিল। এই সুযোগে পরিকল্পিত ভাবে অধ্যক্ষ সদল-বলে এসে যা করলো তা কখনো কল্পনাও করা যায় না। তার দল-বল সসস্ত্রভাবে যে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তা বুঝতে পেরে আমরা যারা এখানে আস্তে আস্তে উপস্থিত হচ্ছিলাম ভয়ে তা মোকাবেলা না করে নিরাপদ দূরত্বে থেকে দেখে গেছি। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ আসাদুল হক অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, এতোদিন অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলামের শুধু দম্ভ দেখেছি আজ দেখলাম তার আসল এবং ভয়ঙ্কর রুপ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, কলেজের সামনের দিকের দোকান ঘর গুলো থেকে গড়ে প্রায় ৫০,০০০হাজার করে টাকা জামানত এবং প্রতি দোকানের ভাড়া হিসাবে রশিদে উল্লেখিত ৩০০ টাকা হলেও বাস্তবে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত দোকান ভাড়ার সমুদয় টাকা অধ্যক্ষের পকেটে যায়। কিন্তু এখানে এসব দুর্নীতি দেখার কেউ নেই।

অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা যায়, রণচন্ডির বদি মৌজার জে এল নং- ৪৬, ১৯৪০ খতিয়ান অনুযায়ী, দাগ নং-৫৩২৫ এর ৪একর ৫৯ শতক সম্পূর্ণ জমির মালিক পৈত্রিক সূত্রে কেতাব উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন ও তাহের উদ্দিন যাহাদের গং সাফাত উল্লাহ। পরবর্তীতে ২০/০৯/১৯৪৩ ইং সালের দলিল অনুযায়ী জানা যায় যে, মোঃ রুহুল আমিন নামের এক ভদ্রলোক উক্ত ৫৩২৫ দাগের ৪ একর ৫৯ শতকের মধ্যে ২ একর ৪০.৫ শতক জমি ক্রয় করে। যা মোঃ রুহুল আমিন ১৯৯৬ সালে আনোরমারী কলেজ স্থাপনকালে কলেজের নামে দান করেন।

অবশিষ্ট ২ একর ১৮.৫ শতক জমির বর্তমান মালিক কেতাব উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন ও তাহের উদ্দিনের ওয়ারিশ বর্গরা। কিন্তু ভূল বসত: ১৯৬২ এর এস.এ খতিয়ানে সম্পূর্ণ ৪একর ৫৯ শতক জমি মোঃ রুহুল আমিনের নামে রেকর্ড হয়। এদিকে উক্ত জমি অফিসিয়ালি কি অবস্থায় আছে তা অনেকেই না জানলেও কেতাব উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন ও তাহের উদ্দিনের ওয়ারিশ বর্গ গণ উক্ত অবশিষ্ট ২ একর ১৮.৫ শতক জমির পৈত্রিক সূত্রে মালিক জেনে তাদের নিজেদের দখলে রেখে এতদিন যাবত ভোগ করে আসছে।

কিন্তু গত ০৪/১১/২০২০ ইং তারিখে খুব সকাল বেলায় আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলাম কলেজের নির্দিষ্ট ২ একর ৪০.৫ শতক জমির সীমানার বাহিরে এসে ভূমিদস্যুর ভয়ঙ্কর রুপে কেতাব উদ্দিন, মফিজ উদ্দিন ও তাহের উদ্দিনের ওয়ারিশ বর্গদের অন্যতম মোঃ চান মিয়ার মিম ষ্টোর নামক দোকান ঘরের তালা ভেঙ্গে ভাংচুর ও লুট-পাট করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং তাদের সম্পূর্ণ ২ একর ১৮.৫ শতক জমি কলেজের দাবি করে দখল করার প্রতিজ্ঞা করে।

এ ব্যাপারে মোঃ চান মিয়া বাদী হয়ে আনোরমারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ও অজ্ঞাতনামা কিছু ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীকে আসামী করে কিশোরগঞ্জ থানা, নীলফামারী-তে একটি এজাহার দাখিল করে (চলবে)।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − 1 =