অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে অভিভাবক ও ম্যানিজিং কমিটি

0
686

সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ একটি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ।যিনি তার শিক্ষা জীবনে এসএসসি,এইচএসসি সহ সকল একাডেমিক পরিক্ষায় তৃতীয় বিভাগ অর্থাৎ থার্ড ক্লাশ পেয়েও দূর্নীতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ হয়ে বীরদর্পে দূর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। বলছিলাম  সোনারগাঁ উপজেলার সোনারগাঁ জি.আর ইনিষ্টিউশন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়ার কথা। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে অভিভাবক ও ম্যানিজিং কমিটি সহ সচেতন মহল।সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেকটা বাধ্য করে টাকা আদায় এবং বিগত দিনে বিদ্যালয়ের খরচ বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে ঐতিহ্য বাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে এবং দিন দিন শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কিছুদিন আগে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ঐ দুর্ণীতিবাজ শিক্ষকের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর দেয়ার পরও অজানা কারণে সে বহাল তবিয়তে বীরদর্পে কাজ করে যাচ্ছে।এমনকি সারা বিশ্বে এই মহামারি করোনা ভাইরাসের সময়েও সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভাংচুরের মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনার সৃষ্টি হয়। সেই ভাংচুরের ঘটনায় তিনি এবং জাতীয় পার্টির কেউ দায়ী নন বলে দাবী জানান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা।

তার দুনীর্তি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা কয়েকবার মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল সহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

আর্থিক লেনদেন, ভবন তৈরিতে অনিয়ম ও শিক্ষার্থী অভিভাবকেরদের সাথে কুরুচিপূর্ণ ব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে এই সুলতান মিয়ার বিরুদ্ধে । দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসে ভুক্তভোগী ১৫শ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অভিভাবক কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বিভিন্ন অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ কায়সার হাসনাতের সহযোগিতায় অধ্যক্ষ হওয়ার কোন যোগ্যতা না থাকলেও মামার পরিচয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সুলতান মিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়, আইন অনুযায়ী শিক্ষা বিভাগে একটি তৃতীয় বিভাগ থাকলে কেউ অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। অথচ এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে পাশ করা সুলতান মিয়া অধ্যক্ষ!

একাধিক অভিভাবক জানান, সদ্য এসএসসি পরিক্ষার ফরমপূরণ করতে তিনি নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা কমিটির অনেক সদস্যকে অন্ধকারে রেখে অতিরিক্ত ফি আদায় করে টেস্টে ৬ বিষয়ে অকৃতকার্যদের ফরম পুরন করার অনুমতি প্রদান করেছেন। ফেল কার প্রতি বিষয়ে ৩-৬ শত টাকা জড়িমানা নিয়ে প্রায় ৮৩জনকে এসএসসি পরিক্ষায় অংগ্রহন করা সুযোগ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিভাবক কমিটির সদস্য দুলাল মিয়া জানান, যারা ৬ বিষয়ে ফেল করেছে তারা এসএসসিতে নিশ্চিত ফেল করবে জেনেও টাকার লোভে আমাদেরকে না জানিয়ে ফরম পূরণ করিয়েছে। যা পাশের হার ৩০-৪৭% এ নামিয়ে আনবে। তাছাড়া আদায়কৃত প্রায় ২ লাখ টাকা কোন খাতে জমা হয়েছে তাও স্পস্ট নয়। সুলতান মিয়া চতুমুখী দুনীতির সাথে জড়িত। সে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদার ছাড়া নিজেই স্কুলের নতুন ভবন করেছে। পুরো টাকা স্কুল ফান্ড থেকে উত্তোলন দেখিয়েছে। অথচ জেলা পরিষদের বরাদ্ধ, পুরাতন ছাত্রদের অর্থায়ন, অভিভাবক কমিটির অর্থায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বরাদ্ধ হলেও তা উল্লেখ করা হয়নি।

জানা যায়, স্কুল ও কলেজ শাখা মিলিয়ে প্রায় ২৫ শত শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। প্রতিবছর ভর্তি ফি থেকে আসে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বেতন থেকে প্রতিমাসে আসে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা হিসেবে বাৎসরিক ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পরিক্ষার ফি থেকে আসে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উন্নয়ন ফি বছরে জমা হয় ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠান থেকে বাৎসরিক আয় ১ কোটি ১৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। যা থেকে প্রতিমাসে শিক্ষকদের বেতন হিসেবে ব্যয় হয় ৬ লাখ ১ হাজার ৯ শত ৪ টাকা। অর্থাৎ বাৎসরিক ব্যয় ৭২ লাখ ২২ হাজার ৮ শত ৪৮ টাকা। বেতন দেয়ার পরও বিদ্যালয়ের আয় থাকে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ১শত ৫২ টাকা। বিবিধ খরচ হিসেবে বছরে যদি ১২ লাখ টাকাও খরচ হয় তবু বিদ্যালয়ের সঞ্চয় থাকবে ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ১শত ৫২ টাকা। হিসাব মতে সুলতান মিয়ার ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা থাকার কথা ৩ কোটি ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৫শত ২০ টাকা। যার কোন হদিস মিলছে না। এছাড়াও সরকারি কোষাগার থেকে শিক্ষকদের বেতন হিসেবে প্রতিমাসে জমা হয় ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩ শত ৬৪ টাকা। তবে এখানে কোচিং বানিজ্যের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

একাধিক সুত্র জানান, দুর্নীতিবাজ সুলতান কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার সন্তানের সব মালয়শিয়ায় লেখাপড়া করছে। সুত্রটি জানায়, অধ্যক্ষের পুরো পরিবার মালশিয়ায় থাকায় সে পিএইচডি করার অযুহাতে ইতিমধ্যে ২ বছরের জন্য ছুটির আবেদন করেছে। এর মাঝে একবছর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে বেতন নিবেন এবং এক বছর বেতন বিহীন ছুটি। যা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক। তিনি বছরে দু’এক বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করে সময় কাটান। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ দুদক গ্রহন করেছে এবং যে কোন সময় তদন্ত নামবে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া বলেছেন, একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে এসব করছে। কোনো অভিযোগেরই কেউ কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 − 9 =