নবীজির উপর দরুদ পাঠের অনন্য ১০ টি উপকারিতা (সহিহ হাদিস থেকে)

0
2048

অপরাধ বিচিত্রা:

 |১| সকল দুশ্চিন্তামুক্তি ও প্রয়োজন পূরণ:

.

একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]

❑ |২| রহমতপ্রাপ্তি, গুনাহমুক্তি ও মর্যাদাবৃদ্ধি:

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”

[সহিহ মুসলিম: ৪০৮]

.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ [নাসায়ি: ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৫০, সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯০৪, হাদিসটি সহিহ]

.

অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ্ ৭০ বার তার প্রতি রহমত পাঠাবেন এবং ফেরেশতাগণ ৭০ বার রহমতের দু‘আ করবেন। [মুসনাদ আহমাদ: ২/১৭২, আত তারগিব: ৬৮০, হাদিসটি হাসান]

❑ |৩| দরুদ মুমিনের জন্য যাকাতস্বরূপ:

.

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা এটা তোমাদের জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [মুসনাদ আহমাদ: ৩/৩৬৫, ইবনু আবি শাইবাহ: ৮৭৯৬, হাদিসটি নির্ভরযোগ্য]

❑ |৪| কিয়ামতের মাঠে নবীজির সান্নিধ্য:

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার উপর দরুদ পড়বে।” [সুনানে তিরমিযি: ৪৮৪, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৬, হাদাসটি হাসান]

❑ |৫| রাসূলের কাছে দরুদ পেশ করা হয়:

.

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]

❑ |৬| নবীজির শাফায়াত লাভ:

.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) লাভ করবে।’’ [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭০২২, সহিহ আত তারগিব: ১/২৭৩, জামি‘উস সগির: ৬/১৬৯, হাদিসটি হাসান]

.

অন্য বর্ণনায় ‘নিষ্ঠার সাথে’ পড়ার কথা বলা হয়েছে। (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [তাবারানি, কাবির: ৫১৩, আল কাউলুল বাদি’: ১৬০, রাবিগণ নির্ভরযোগ্য]

❑ |৭| দরুদ দু‘আ কবুলের অন্যতম উপায়:

.

একবার ইবনু মাস‘উদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে; এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [তিরমিযি: ২/৪৮৮, হাসান]

.

আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]

❑ |৮| রাসূলের দু‘আ লাভের সুযোগ:

.

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার জন্য ১০ বার দরুদ পাঠ করি (দু‘আ করি)।’’ [তাবারানি: ২৬৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৩, (বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)]

❑ |৯| দরুদ (গুনাহর) কাফফারাস্বরূপ:

.

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা, আমার উপর দরুদ পড়া তোমাদের জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য)।’’ [ইবনু আবি আসিম, আস সলাতু ‘আলান নাবিয়্যি: ৭৮, ইবনু হাজারের মতে, সনদের রাবিগণ সহিহ হাদিসের রাবি]

❑ |১০| অনন্য মর্যাদা ও বৈশিষ্টপূর্ণ আমল:

.

কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]

.

আল কুরআনে অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে এমনটি বলা হয়নি যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এরূপ করেন, সুতরাং তোমরাও করো।’ নিঃসন্দেহে এটি দরুদের বিশেষ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্টের প্রমাণ।

.

আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দিন, যেন আমরা সর্বাবস্থায় রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করতে পারি এবং দরুদময় জীবন গঠন করতে পারি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × two =