আজ ১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এইদিনে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলের ভেতর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুক্তিযোদ্ধা সহযোগীসহ ১৩৬ বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। সেই থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর এলে ওই শহীদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালিত হয়।
স্থানীয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ ন্যাশনাল জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা সকালের নাস্তা খেতে বসার মুহূর্তে পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পার্শ্ববর্তী ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে মিলের ভেতর ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে থাকে।
ওই দিন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ন্যাশনাল জুট মিলের নিরীহ বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক লাইনে দাঁড় করিয়ে হানাদার বাহিনী গুলি করে নির্মম গণহত্যা চালায়।
গণহত্যা চালিয়ে দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙে মিল ত্যাগ করে পাক বাহিনী। পরে ওইসব মৃতদেহ মিলের সুপারি বাগানে পড়ে ছিল। পাক বাহিনীর ভয়ে এলাকার কেউ মিলের ভেতরের লাশগুলো উদ্ধার করার সাহসও পায়নি। ফলে মৃতদেহগুলো শেয়াল-কুকুরের খাদ্যে পরিণত হয়।
দেশ স্বাধীন হলে এলাকাবাসী মিলের ভেতর গিয়ে ১৩৬ জনের মৃতদেহ বিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে মৃতদেহগুলো ন্যাশনাল জুট মিলের দক্ষিণ পাশে গণকবরে সমাহিত করেন।
মিল কর্তৃপক্ষ গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’ নামক একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। শহীদের গণকবরের পাশে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর ১৩৬ জন শহীদের গণকবরে উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলাবাসী শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলেও শহীদদের গণকবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলাবাসী।