‘গত তিন মাস আগে খলিশাখালী স্কুল মাঠে এক সালিশে আমাদের একঘরে করা হয়েছে। আমাদের কাছে কেউ কিচ্ছু বিক্রি করে না, ওষুধও না। কয়েক দিন আগে স্থানীয় শংকর বিশ্বাসের ওষুধের দোকানে গেলে আমার পুতাকে (ছেলে) ওষুধ দেয়নি। সাত মাইল দূরে আগদিয়া বাজার ও হাট থেকে আমাদের সব কিছু কিনতে হয়। কেউ ঠিকমতো কথাও বলে না। ছেলে আশিক এসবের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তার ওপরে ভীষণ খ্যাপা। বেশ কিছুদিন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তারপরও সে রক্ষা পায়নি।’
কথাগুলো বলছিলেন নড়াইল সদরের সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশিক শেখের (২০) মা নলদীর চর গ্রামের রাবেয়া বেগম। তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগে সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের বিরুদ্ধে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সদর থানায় মামলা হয়েছে।
আশিক এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আশিকের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিংগালোলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও নলদীরচর গ্রামের ইকরাম শেখের ছেলে আশিক শেখ ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের প্রতিবাদ করায় তার সঙ্গে চেয়ারম্যানের বিরোধ তৈরি হয়। এরই জের ধরে গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে আগদিয়ার চর ক্লাবের পাশে আশিক দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখসহ তার লোকজন তার দুই হাত, পা এবং মাথা কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন।
আহত আশিকের বাবা ও মামলার বাদী ইজি ভ্যানচালক ইকরাম শেখ বলেন, ‘চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলেন না। ছেলে আশিক এসবের প্রতিবাদ করায় চেয়ারম্যান তার পরে ভীষণ খ্যাপা ছিলেন। বেশ কিছুদিন সে পালিয়েও বেড়াচ্ছিল। তারপরও সে রক্ষা পায়নি। আমরা এর বিচার দাবি করি।’
তিনি আরও জানান, ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার মাথার আঘাত গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়া দরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ বলেন, ‘ঘটনার দিন তিনি এলাকায় ছিলেন না। সামনে নির্বাচন তাই তার বিরুদ্ধে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।’
তিনি দাবি করেন, আশিক অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল একটি ছেলে। সে স্থানীয় শহীদ মিনারসহ এখানে-সেখানে সিগারেট খায়, ইভটিজিং করে। তার এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য তাকে কয়েকবার চড়-থাপ্পড় এবং লাঠি দিয়ে মেরেছি।
‘আশিকের বাবা ইকরাম শেখ ছেলেকে প্রশ্রয় দেন। গত তিন মাস আগে এসব কারণে তার পরিবারকে এক গ্রাম্য সালিশে প্রায় ১৫০ জনের স্বাক্ষর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাজচ্যুত করা হয়। ওই পরিবারের সঙ্গে এখন কেউ কথা বলে না, কেউ কিছু বিক্রিও করে না।’
গ্রাম্য সালিশে কাউকে এভাবে একঘরে করার নিয়ম আছে কি-না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যানকে অকপটে বলেন, সরকারিভাবে এর বৈধতা রয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন বলেন, এ ঘটনায় রোববার একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কাউকে একঘরে করার কোনো বিধান আছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাউকে একঘরে বা সমাজচ্যুত করার অধিকার কারোর নেই। সে একঘরে করার কে?