রাশেদুল ইসলাম: প্রবাদে আছে-বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ! কিন্তু বরগুনা থানার অনন্য পুলিশিং বদলে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা। আর এ বদলে যাওয়া থানার কারিগর অফিসার ইনচার্জ কে এম তারিকুল ইসলাম। চলতি বছরের জুন মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হতাশাগ্রস্ত বরগুনাবাসীকে তিনি দেখিয়েছেন আলোর পথ। থানা যে কোনো ভয়ংকর স্থান নয়, পুলিশ কোনো আতংকের নাম নয় তা জনগণের কাছে বিশ্বাসে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সুমিষ্ট ব্যবহার ও আতিথেয়তায় বরগুনাবাসীর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে পুলিশ প্রশাসন।
মাদক, সন্ত্রাস, চোর-ডাকাত, অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষ ও বিচার প্রার্থীদের পূর্ণ সেবা নিশ্চিত করতে থানার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন ওসি তারিকুল। থানায় কর্মরত কোন পুলিশ সদস্য অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। অপরাধ বিচিত্রাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ওসি তারিকুল ইসলাম বলেন, বরগুনা পুলিশ সুপার মো: মারুফ হোসেন (পিপিএম) স্যার জেলার সকল পুলিশ অফিসারদের সঠিকভাবে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
তার দুরদর্শিতার কারণে পুলিশ প্রশাসনের মাঝে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের পথচলা, রাষ্ট্রের পবিত্র পোশাকের মর্যাদা রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বরগুনা সদর থানাকে এর আগেও জেলাবাসী দেখেছেন। দেখেছেন থানা কতো নির্দয়ের স্থান, নিষ্ঠুরতা ও পাপীষ্ঠের জঘন্যতম স্থান হতে পারে। কিন্তু ওসি তারিকুল আন্তরিক সেবায় তা ভুল প্রমাণ করে আজ তার আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তিনি প্রান্তিক নিপীড়িত অসহায় মানুষের কথা যেমন মন দিয়ে শোনেন, তেমনি বিচার প্রার্থীদের প্রতি সহযোগীতার হাতও বাড়িয়ে দেন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তার মনের ব্যপ্তি কতো বিস্তৃত হতে পারে তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওসি তারিকুল। কর্মজীবনের মতোই ব্যক্তি জীবনেও সততা ও নিষ্ঠার সাথে তার পথচলা। তিনি জান্নাতুল তাজরীন রুপন্তী নামে একজন কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা। তার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল পারিবারিক ইতিহাস। তার বাবা অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ ছিলেন বাগধা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের প্রিন্সিপাল। মানুষ গড়ার এই কারিগর অত্যন্ত মেধাবী ও গুণী ব্যক্তি ছিলেন।
তবে বহু আগে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। কিন্তু মৃত্যুর আগে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন তিনি। বাবার আদর্শকে বুকে ধারণ করে এবং মা রিজিয়া বেগমের দোয়া ও ভালোবাসায় অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে বদ্ধ পরিকর ওসি তারিকুল। ১৯৯১ সালে কে এম তারিকুল ইসলাম বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া থানা এলাকায় বাগধা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে গৌরনদী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৯৬ সালে বিএম কলেজ থেকে অনার্স পাশ করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে মাষ্টার্স করেন বরগুনা থানার বর্তমান জনবান্ধব ওসি কে এম তারিকুল ইসলাম।
কর্মজীবন: ২০০১ সালে আউট সাইড ক্যাডেট হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন তারিকুল। রাজশাহী সারদা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় যোগদান করেন। পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার মাধ্যমে যুক্ত হোন খুলনা র্যাব-৬ আর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তারিকুলের নেতৃত্বে সাতক্ষীরার আলোচিত জঙ্গি দাজ্জালকে ৪১টি তাজা গ্রেনেড ও দেশী-বিদেশী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। তৎকালীন সময়ে বর্তমান সরকার প্রধানকে হিংস্র জঙ্গীরা গ্রেনেড হামলা করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য নস্যাৎ হয়ে যায়।
তবে ঘাতকদের গ্রেনেড-এ প্রাণ কেড়ে নেয় অসংখ্য নেতাকর্মীর। সেই আলোচিত গ্রেনেড হামলার একজন স্বাক্ষী ওসি তারিকুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এত বড় আলোচিত জঙ্গীকে তাজা গ্রেনেডসহ গ্রেপ্তার করেছিলাম, কিন্তু স্বীকৃতিস্বরুপ রাষ্ট্র থেকে কিছুই পেলাম না। সফলতার সাথে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে আবার পুলিশের বিশেষ শাখায় বদলী হয়ে গণভবনে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সরকারিভাবে আমেরিকায় ভিআইপি নর্থ ট্রেনিং কোর্স সফলতার সাথে শেষ করেন। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে বরিশাল রেঞ্জে যোগদান করেন। ইতিপূর্বে পটুয়াখালী, কলাপাড়া ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সবশেষ চলতি বছরের জুন মাসে যোগদান করেন নানা কারণে আলোচিত বরগুনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বরগুনা থানায়। যোগদানের পর থেকেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছে বরগুনাবাসী।
বরগুনা থানা এলাকায় কমেছে অপরাধ কর্মকান্ড, আর পুলিশের প্রতি মানুষের বেড়েছে আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে ও ওসি তারিকুলের নেতৃত্বে থানা এলাকায় অপরাধ দমনে প্রতিনিয়ত চলছে সফল অভিযান। বরগুনা কালিরতবকের স্বর্ণা মার্ডারের আসামী ৪৫ মিনিটের মধ্যে কে.জি স্কুল রোড থেকে গ্রেপ্তার করে জনগণের কাছে প্রশংসিত হোন ওসি তারিকুল।
এছাড়া বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে রহস্য উদঘাটন করেছেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বরগুনাবাসীর মনে ঠাঁই করে নেয়া ওসি কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য জনগণের সেবা করা। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে লোভ-লালসা পেছনে ফেলে জনগণের সেবায় আমৃত্যু নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান এই পুলিশ কর্মকর্তা।