‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মকে বারবার মনে করিয়ে দিতে চাই’

0
406

পতাকাবিক্রেতা মো. আসাদুজ্জামান। জন্ম দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৩০ বছর পরে। পেশায় সে দিন মজুর। কিন্তু বিজয়ের মাসে নতুন স্বপ্ন দেখেন আসাদুজ্জামান। তাই এই মাসে সে কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা হাতে। এ পতাকা তুলে দেন স্বাধীন দেশের নতুন প্রজন্মের হাতে হাতে।

বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে ফেরি করে জাতীয় পতাকা বিক্রি করা তার পেশা। রাতে যে এলাকাতে পতাকা বেচেন সে এলাকাতেই রাত কাটান।

রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পতাকা ফেরি করার সময় তার সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে ছোট। গত দুই বছর আগে তার এলাকার মনির হোসেন ও ফারুক মিয়ার সাথে পতাকা বেচাকেনা করতে আসেন। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে পতাকা বেচাকেনার ভরা মৌসুম হলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মাত্র দুইদিন পতাকা বেচাকেনার সময় পাওয়া যায়। এ বছরও ডিসেম্বর শুরু থেকে পতাকা বেচাকেনা শুরু করেছেন তিনি এবং তা চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত বছর ডিসেম্বর মাসে পতাকা বেচাকেনা করে তার ব্যবসা হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা।

বাবা কৃষি কাজ করেন। আর বড় ভাই গাড়ি চালক। বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারের খরচ তাকেই বহন করতে হয়। পতাকা নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে ও গাড়িতে বেচাকেনা করে উপার্জিত টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান আসাদুজ্জামান।

তার কাছে সাত রকমের পতাকা রয়েছে। এগুলো হলো- স্টিকার, লাঠি পতাকা, মাথার ফিতা, জিরো পতাকা, দুই ফুট, সাড়ে তিন ফুট এবং পাঁচ ফুট পতাকা। পতাকার সাইজ অনুসারে এর ক্রেতাও বিভিন্ন ধরনের। স্টিকার বিক্রি করেন কোমলমতি শিশুদের কাছে। লাঠি পতাকা বিক্রি করেন রিকশা ও সাইকেল চালকদের কাছে। জিরো পতাকা বিক্রি করেন মোটরসাইকেল এবং ছোট যানবাহনের চালকদের কাছে। আর মাথার ফিতা কেনেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের পতাকা বেচেন বলে আসাদুজ্জামান জানান।

এ ব্যবসা কেন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বড় হতে চাই। এ পতাকা বেচে নতুন প্রজন্মের কাছে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের কথা। ব্যবসায় তার লাভ যাই হোক এই অর্জনকে তিনি বড় করে দেখছেন।

আসাদুজ্জামান জানান, এবারও মনির হোসেন ও ফারুক মিয়ার সাথে পতাকা হাতে মির্জাপুরে এসেছেন। ২-৬০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের পতাকা আছে। সেই প্রাণের পতাকা কাঁধে নিয়ে শহর-বন্দর ঘুরে ১০ টাকা থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত পতাকা বেচবেন। ১৬ ডিসম্বরের পর থেকে সে আবার তার পুরানো দিন মজুরের কাজে নেমে পড়বেন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতার মাস মার্চ আসলে আবার বেরিয়ে পড়বেন পতাকা হাতে পথে-প্রান্তরে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five + twenty =