পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ যুগান্তরের সাংবাদিক পরিচয়ে পুরান ঢাকার ভাঙ্গাড়ী কুদ্দুস মেহেদীর কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি

0
619

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসান: রাজধানীর পুরানো ঢাকার কোতয়ালী, বংশাল ও চকবাজার থানা এলাকার আলোচিত পুলিশের লাইনম্যান ও সাবেক আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা উত্তোলনকারী সোর্স মেহেদীকে নিয়ে চরম বিতর্কিত হচ্ছে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা। কারন বাবুবাজার এলাকার এক সময়ের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কুদ্দুস মাঝি তার ব্যবসা ছেড়ে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে সাবেক আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নামে চাঁদা আদায় করতে গিয়ে পুলিশের হাতেই ধরা পড়ে জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে। এখন সে নিজেকে মেহেদী নামে যুগান্তর পত্রিকার ফটোসাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে পুরান ঢাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী এই এলাকার একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও পুলিশের লাইনম্যান এবং চাঞ্চল্যকর মামলায় জেলখাটা আসামী। তার বিরুদ্ধে ডিএমপি ও জেলার বিভিন্ন থানায় বিস্তর মামলা ও জিডি রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, মহাপরিচালক (র‌্যাব), ঢাকার পুলিশ কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে অর্ধশতাধিক অভিযোগ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে অদ্যবধি তার বিরুদ্ধে ৩২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রাইমারী শিক্ষায় স্বল্প শিক্ষিত এই মেহেদী দেশের প্রথম শ্রেণির সংবাদপত্রগুলোতেও চরমভাবে সমালোচিত।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে তার নাম কুদ্দুস মাঝি, সে পিরোজপুর জেলার সদর থানার কালিকাঠি গ্রামের মৃত ইছাক মাঝির দ্বিতীয় পুত্র। তার মায়ের নাম জহুরা বেগম। সে নিজ এলাকায় ভাঙ্গারী কুদ্দুস নামে ব্যাপক পরিচিত। তবে মেহেদী হাসান তার ছদ্ম নাম। এই ছদ্ম নামধারী মেহেদী বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি ড. জাবেদ পাটোওয়ারীর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা তোলার দায়ে কোতয়ালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যায়। এ মামলায় বেশ কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে অপকৌশলে বহুল প্রচারিত, পাঠক নন্দিত, জনপ্রিয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় ফটো সাংবাদিক পদে ঢুকে পড়ে। তাকে সাংবাদিক কার্ড দেয়ায় জনপ্রিয় এই পত্রিকাটি নিয়ে পাঠক সহ সচেতন মহলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ৩০ মে-২০১৮ খোদ যুগান্তরেই চাঁদাবাজ মেহেদীসহ তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বিরুদ্ধে ‘লালবাগে ১১ পুলিশের নামে চাঁদা আদায়, আইজিপি’র নামেও চাঁদা, প্রতিবাদ করলেই নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর কোতয়ালী থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে ৪ জুন-২০১৮ মনির নামক এক ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী মেহেদীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী মামলা করে। কোতায়ালী থানায় মামলা নং-১১। ওই সময়ে ডিএমপি’র লালবাগ বিভাগের অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তার গভীর সখ্যতা থাকলেও শেষ রক্ষা পায়নি। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে থানা পুলিশ তাকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। এ ঘটনার পূর্বে দৈনিক সোনালী খরব পত্রিকায় ১৩ ও ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ওই চক্রের ৩ হোতা মেহেদী হাসান কুদ্দুস, ছোট ভাই ইউনুস মাঝি ওরফে সোহেল হাওলাদার ও ভাগ্নে সালাম বেপারীর ছবিসহ ২টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার ফলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে স্ব-দলবলে ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ওই প্রতিবেদকের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ওই সময় তাকে গুরুত্বর আহত করে মোবাইল, মানিব্যাগ ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক কোতয়ালী থানায় মেহেদীসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। থানার ওই মামলা নং-২৬।

এছাড়া ভয়ংকর চাঁদাবাজ মেহেদী বাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য জিডি’র মধ্যে যেগুলোর সন্ধান মিলেছে তা হলো কোতয়ালী থানার ১১ ডিসেম্বর-২০১৭ তারিখের জিডি নম্বর-৩৭২ এবং একই থানায় চাঁদাবাজীর অভিযোগে ২ অক্টোবর-২০২০, জিডি নম্বর ৮০ এবং ২৪ অক্টোবর ২০২০, জিডি নম্বর ১১৭৭। ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানার ১৭ ডিসেম্বর-২০১৭ তারিখের জিডি নম্বর-৬৪৫, একই থানার ২৭ ডিসেম্বর-২০১৭ তারিখের জিডি নম্বর-১০৪৯, এবং ১১ জুলাই-২০১৮ তারিখের জিডি নম্বর-৫০৩, ৩ মার্চ-২০২০ তারিখের জিডি নম্বর-১২২। ছদ্ম নামধারী এই দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ মেহেদী চক্রের ভয়ংকর অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ে ইতিপূর্বে দৈনিক কালের কন্ঠ, যুগান্তর, নয়াদিগন্ত, আজ-কালের খবরসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তাদের ছবিসহ অন্তত ৩২টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সুচতুর এই মেহেদী পূর্বে পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে যেসব অবৈধ স্পট ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করত, সেই স্পটগুলো প্রায় দুই বছর ধরে দৈনিক যুগান্তর এর পরিচয়ে দাপট দেখিয়ে দ্বিগুন চাঁদা আদায় করে আসছে। এছাড়া যুগান্তরের সাংবাদিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে বাবু বাজার ব্রিজের নিচে বিশাল জায়গা জোরপূর্বক দখল করে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিম্ন মানের ভেজাল ও নকল পণ্যের শতাধিক ভাসমান দোকান সহ ১৪টি টং দোকান বসিয়ে প্রতি দোকানদার থেকে দৈনিক ৩ শত টাকা করে চাঁদা তুলছে। অপরদিকে রাতের বেলা বড় ট্রাক ও কন্টেইনার পার্কিং করিয়ে প্রতি গাড়ি থেকে ৬শত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।

এসব চাঁদা তার ভাই ইউনুস মাঝি, গৌতম, জসিম, সোহেল, ভাগিনা সালাম, সজল ও সালাউদ্দিনকে দিয়ে তুলছে। অপরদিকে সে ২সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে ওই মাজারের উত্তর পার্শ্বে ব্রীজের নিচে আরো একটি জায়গা জোরপূর্বক দখল করে প্রতি শুক্রবার ভোরে ৩শ থেকে ৪শ বিভিন্ন পন্যের দোকান বসিয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি দোকানদার থেকে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছে। এভাবে সে দৈনিক যুগান্তরের সুনাম ক্ষুন্ন করে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার এবং শুক্রবারের ভোরের বাজার থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপি’র লালবাগ ও ওয়ারি বিভাগের অধিকাংশ পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ, ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ও টিআই তার চাঁদাবাজীর স্বীকার হচ্ছে।

আবার কারো-কারো সাথে বাকবিতন্ডে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি নয়াবাজার ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ইনচার্জ টিআই মঞ্জু, বাবু বাজার পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ এসআই রাজীব ও বংশাল ফাঁড়ীর সাবেক ইনচার্জ নুরে আলম, কোতয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নাজমুল, বংশাল থানার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন জন, ৩৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাবেল হোসেন পাপন, বাবু বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাকির হোসেন রনিসহ অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ এলাকাবাসীর মতে মেহেদীর মতোর এমন অশিক্ষিত-অদক্ষ, একাধিকবার জেল খাটা আসামী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি কিভাবে বহুল প্রচারিত ও পাঠক প্রিয়, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক পরিচয় বহন করে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনাসহ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + 19 =