ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন ও রাজউক এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয় সিটি ডেভলাপম্যান্ট এজেন্সি। একটি বাসযোগ্য শহর তৈরির গুরু দায়িত্ব রয়েছে রাজউকের হাতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্প্রতি ঝিমিয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরে অনিয়মিত ভবনের ছড়াছড়ি। বাণিজ্যিক অনুমোদন না নিয়েও বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে অধিকাংশ ভবন। ঢাকা শহরে দেখা যায় অধিকাংশ বহুতল ভবনের সাথে বাণিজ্যিক স্থাপনা ও অপরিকল্পিত দোকান। এর কারণে অস্বাস্ব্যকর পরিবেশ সৃষ্টি ও যানজট নিত্যদিনের ব্যপার। অধিকাংশ আবাসিক ভবনের সামনে দোকান নির্মানের ফলে যতদূর দৃষ্টি যায ততদূর শুধু দোকান আর দোকান। আবাসিক এলাকাগুলো বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। রাজউকে ক্ষতিগ্রস্তরা একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী সেটব্যাক না রেখে বহুতল ভবন নির্মানের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ভবন মালিকরা কিছুতেই মানছে না রাজউক থেকে অনুমোদিত নকশা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে তারা মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নিয়েছেন। তাই রাজউকের নিয়মের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই।
একই অভিযোগ জমির ছাড়পত্রের ব্যপারে। জমির আকার ও অবস্থান অনুযায়ী টাকা দিতে হয়। নতুবা ছাড়পত্রের আবেদন মাসের পর মাস পড়ে থাকে। আবার টাকা দিলে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ভ‚মিপল্লি আবাসিক এলাকা, সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়নগঞ্জে অনেক ভবনে বাণিজ্যিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অথচ এলাকাটি আবাসিক এলাকা। ভবনের আকার অনুযায়ী টাকা না দিলে নকশা পাশ যেন স্বপ্নের ব্যপার। সম্প্রতি রাজউকের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে অনেক সেবাগ্রহির অভিযোগ রয়েছে। অনিয়মিত ভবনগুলোতে নোটিশ জারি করা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। উচ্ছেদ প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে না।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক ভবন মালিক অনিয়ম করে ভবন নির্মান করছেন। এসব ভবনে রাজউকের অভিযান থাকছে না। অনিয়মিত ভবনগুলোকে নোটিশ দেয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যক নোটিশ বিভিন্ন জোনের অথারাইজড অফিসারের কাছে পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। বিশেষ করে জোন ৬/১ এর নিকট প্রচুর সংখ্যক নোটিশ স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।
এগুলো স্বাক্ষর করে জারি না করার কারণে অনিয়মিত ভবন মালিকরা সুযোগ পাচ্ছেন ও ক্ষতিগ্রস্তরা শুধু হায় হায় করছেন। অনিয়মিত ভবন মালিকদের সাথে রাজউকের ইমারত পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি নতুন নয়।
তথ্য অধিকার আইনে ভবন সংক্রান্ত তথ্য চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আবেদনকারীকে দেওয়া হচ্ছে না। আবেদনকারী বাধ্য হয়ে তথ্য কমিশন বরাবর রাজউকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন যা সময় সাপেক্ষ। এভাবে তথ্য না দেয়ার কারণ হচ্ছে রাজউকের অনিয়মকে ঢাকা দেয়ার পায়তারা।
রাজউকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বিশাল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এদিকে পরিদর্শক ও অথারাইজড অফিসারের কথা বলাই বাহুল্য। এ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নীতির লাগাম ধরতে হবে অনতিবিলম্বে।