আশুলিয়ায় খলিল মেম্বারের করাল গ্রাসে উজাড় হচ্ছে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি

0
522

ইমদাদুল হক: প্রতি বছর শুকনো মৌসূম এলেই বিস্তীর্ণ কৃষি জমির উপরিভাগ কেটে উজাড়ের মহা উৎসবে মেতে উঠে একটি মাটি খেকো চক্র৷ ভেকু(খননযন্ত্র) দিয়ে বিস্তীর্ণ কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বংশী নদীর কুল ঘেঁষা দু’টি স্থানে নিষিদ্ধ ভেকু(খননযন্ত্র) লাগিয়ে মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে বিস্তীর্ণ কৃষি জমি৷ আর এই কাজ করছেন সয়ং স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার খলিল ও আরও দুই একজন। সরজমিনে আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটির কাইলকাপুর ও গোয়ালবাড়ি এলাকা গিয়ে দেখা যায় ভেকু(খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে নিয়ে যাওয়ার  এই চিত্র। ব্যপারী পাড়া এলাকায় বংশী নদীর পাশে প্রায় ১ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮-১০ ফুট গর্ত করে মাটি তুলে এমবি এন ব্রিকস নামের একটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। পাশেই কালিয়াকৈর-গোয়ালবাড়ি সড়ক, মাটির কাটার কারণে ধসে যাওয়ার সংঙ্কায় রয়েছে সড়কটি। এই মাটি কাটার দ্বায়িত্বে থাকা ব্যক্তির সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার সর্তে বলেন, ‘প্রতি গাড়ি (ট্রাক) মাটি বিক্রি করা হয় ১২০০ টাকা করে৷ এখানে গত তিন চার দিন থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মালিকদের শতাংশ প্রতি ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়।’ অপরদিকেকে রাঙ্গামাটির কাইলকাপুর এলাকায় দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বংশী নদীর পাশেই স্থানীয় মেম্বার খলিলের ক্রয়কৃত নিজস্ব ভেকু ও ট্রাক দিয়ে নিজস্ব ভাবে নদীর কুল কেটে রাস্তা করে মাটি নিয়ে দিচ্ছে পাশের এক ইট ভাটায়। মাটি কাটা হচ্ছে তার পাশের খেতে সরিষা ফুল ফুটে আছে ভুট্টার ছোটো ছোটো গাছ সবে উঠে দাড়াচ্ছে। মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার গভিরতা বেশী থাকায় সেই খেতগুলোর পাশ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি কাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গেলে ভেকুর ড্রাইভারসহ তারা পালিয়ে যায়। পরে শুভ্রত নামের ট্রাক ড্রাইভারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বংশী নদীর কুল ঘেঁষে ৮ ফুট পরিমান গর্ত করে মাটি কাটছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খলিল। সেই মাটিগুলো আবার পাশের একটি ইটভাটার কাছে বিক্রি করছেন তিনি। আমরা কিছু জানি না মেম্বার যেভাবে বলছে আমরা সেভাবেই করছি। মেম্বাররের কেনা ভেকু(খননযন্ত্র) দিয়ে তো প্রতি বছরেই মাটি কাটা হয়ে থাকে। এবারও আমরা কাটছি। এমবি এন ব্রিকস ইটভাটার ম্যানেজার আরমান প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বছরেই বিভিন্ন মাটি ব্যবসায়ীরা আমাদের ইটভাটায় মাটি দেয়। এবারও তারাই মাটি দিচ্ছেন। কোথা থেকে মাটি দেয় বা কিভাবে মাটি আনা হয় আমরা সেটা জানি না।আমরা টাকা দেই আমাদের মাটি পেলেই চলে৷ এ ব্যপারে ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার খলিল প্রতিবেদককে জানান, মাটি কাটা না গেলে বন্ধ রাখা লাগবে। আমি কালকেই মাটিতে ভেকু লাগিয়েছি আজই আপনারা এসেছেন। আমি তো সবাইকেই সম্মানি করি দুই একদিন পরে আসেন আপনাদেরকেও করবো। জনপ্রতিনিধি হয়ে কিভাবে এই কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি এলাকায় ইটভাটা না চলে যদি মাটি কাটা না যায় তাহলে বন্ধ রাখমু অসুবিধা কি? নদীর মাটি কাটাও নিষেধ ফসলি জমির মাটি কাটাও নিষেধ তাহলে বাংলাদেশে ইটভাটা চালাবো কেমনে।’ সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ জানান , কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।আমরা শঙ্কিত, এভাবে উর্বর মাটি নষ্ট হলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হবে। ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোঃ রাজীব জানান, প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোন কোন স্থান থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় দেওয়া হবে সেই বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে হলফনামা দাখিল করতে হবে। তবে সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়ার বেশিরভাগ ইটভাটা হলফনামা দাখিল না করে অবৈধ ভাবে মাটি উত্তোলন করছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি যে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নিজেদের ক্ষমতা খাটিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় দিচ্ছেন। আমরা যেসকল স্থান থেকে এমন খবর পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) বেগম শামীম আরা নিপা জানান, আমারা যে ইটভাটাগুলেকে লাইসেন্স দিয়েছি তাদের বলা আছে নির্ধারিত স্থান থেকে মাটি কাটবে। কেউ যদি অবৈধ ভাবে মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

😠

1

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + 1 =