Site icon Aparadh Bichitra

তওবা : কেন ও কিভাবে করতে হবে? তওবা শুদ্ধ হবার শর্তাবলী এবং তওবার দোয়া সমুহ

আলেমগণ বলেন, সকল প্রকার পাপ,অপরাধ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব তথা অবশ্য করণীয়।
তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ – ফিরে আসা।
পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া,যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
পাপ বা অপরাধ দু ধরনের হয়ে থাকে :
এক. যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা,নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা,সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।
দুই. যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার,চুরি-ডাকাতি,ঘুষ খাওয়া,অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ ইত্যাদি।
প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপসি‘তি জরুরী।


শর্ত তিনটি হল :
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট চারটি:
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
(৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।
মানুষের কর্তব্য হল,সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবা করবে,যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবা করে,অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবা না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবা হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবা করলে সকল পাপ থেকে তাওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে,ব্যভিচার করে,মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
তওবা করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবা করতে হবে। তওবা রক্ষা করা যায় নাবা বারবার তওবা ভেঙ্গে যায়এ অজুহাতে তওবা না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ নয়। অন্তর দিয়ে তওবা করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে।
কুরআন,হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (سورة النور : 31)
হে ঈমানদারগন! তোমরা সকলে তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা কর,যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন-নূর : ৩১)
তিনি আরো বলেন:
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْه (سورة هود: 3)
আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,অতঃপর তাওবা কর। (সূরা হুদ : ৩)
তিনি আরো বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا. (سورة التحريم : 8)
হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর,বিশুদ্ধ তাওবা। (সূরা আত-তাহরীম : ৮)
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি:
১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল ঈমানদারকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২- তাওবা দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য লাভের মাধ্যম।
৩- তাওবার আগে ইসে-গফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তারপর তাওবা। ভবিষ্যতে এমন পাপ করব নাবলে তাওবা করলাম কিন‘ অতীতে যা করেছি এ সম্পর্কে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম না। মনে মনে ভাবলাম যা করেছি তা করার দরকার ছিল,ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন কি?তাহলে তাওবা কবুল হবে না। যেমন দ্বিতীয় আয়াতটিতে আমরা দেখি,আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,তারপর তাওবা কর।
৪- তওবা ও ইসে-গফার হল পার্থিব জীবনে সুখ শানি- লাভের একটি মাধ্যম যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى
আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর তৎপর তাওবা কর,তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট কাল পর্যন- সুখ-সম্ভোগ দান করবেন।(সূরা হুদ : ৩)
নূহ আলাইহিস সালাম তার সমপ্রদায়কে বলেছিলেন :
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا ﴾ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا ﴾ وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا ﴾ (سورة نوح: 10-12)
আমি বললাম,তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের সমৃদ্ধি দান করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। (সূরা নূহ : ১০-১২)
৫- আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ তাওবা করতে আদেশ করেছেন। বিশুদ্ধ তাওবা হল যে তাওবা করা হয় সকল শর্তাবলী পালন করে।
তওবা ও ইস্তেগফার (অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করার দোয়া ও শর্ত সমুহঃ
আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’ (নূর ২৪/৩১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। কেননা আমি দৈনিক একশ’ বার তওবা করি।[129] তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সবচেয়ে খুশী হন বান্দা তওবা করলে’। [130] তিনি আরও বলেন,