মির্জা কাদেরের চাচা, নানা ও মামা ছিলেন রাজাকার ও শান্তিবাহিনীর কমান্ডার: এমপি একরাম

0
526

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই বসুরহাট পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সম্পর্কে বেশ কড়া কথা বলেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। কাদের মির্জার চাচা ছিলেন রাজাকার এবং নানা ছিলেন শান্তি বাহিনীর কমান্ডার, জানান এই সংসদ সদস্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সাংসদ একরামুল ফেসবুক লাইভে দেওয়া সংক্ষিপ্ত একটি ভিডিও বার্তায় এ মন্তব্য করেন।

২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি রাতেই ভাইরাল হয়ে যায়। তবে সাংসদ একরামুল করিমের ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি প্রচারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে এবং আজ শুক্রবার সকালে জেলা শহরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। মিছিলে তারা কাদের মির্জার বিরু’দ্ধে নানা স্লোগান দেন।

ভিডিও বার্তায় একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি কথা বললে তো আর মির্জা কাদেরের বিরু’দ্ধে কথা বলব না। আমি কথা বলব ওবায়দুল কাদেরের বিরু’দ্ধে। একটা রাজাকার পরিবারের লোক এই পর্যায়ে এসেছে, তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কথা বলব। আমার যদি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না আসে। তাহলে আমি এটা নিয়ে শুরু করব।

লাইভ ভিডিওর বিষয়ে শুক্রবার সকালে সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তো ওবায়দুল কাদেরের বিরু’দ্ধে কিছু বলিনি। আমি বলেছি মির্জা কাদেরের পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী। আর কাদের ভাই হলো বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। রাজাকার বংশের কাদের মির্জা গত ১ মাস ধরে দলের বিরু’দ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এর কোনো বিচার হয় না।

একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, মির্জা কাদেরের চাচা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তাকে কাদের ভাইয়ের বাহিনী গু’লি করে মে’রেছে। তার বাবা ছিলেন মুসলিম লীগার। মির্জা কাদেরের নানা ছিলেন শান্তি বাহিনীর কমান্ডার। মামা ছিলেন রাজাকার। তাদের পুরো বংশই ছিল রাজাকার। একটা রাজাকার বংশের লোক নিয়মিত ৩০০ সাংসদের বিরু’দ্ধে বলে যাচ্ছেন, তার বিরু’দ্ধে কোনো ভূমিকা নেই দলের ভেতর।

ভিডিওতে ওবায়দুল কাদেরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আসলে কাদের ভাইকে নিয়ে কিছু বলিনি। গত ১ মাস ধরে ধৈর্য ধরেছি। আমি মির্জা কাদেরকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছি।

জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে জটিলতা কী? জানতে চাইলে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, কমিটি নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা নেই। প্রায় ৫-৬ মাস আগে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ওই কমিটি এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আজ দুপুরে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যু’ত্থানের সময় ঢাকায় ওবায়দুল কাদের মা’রা গেছেন বলে তারা শুনেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নি’র্মমভাবে হ’ত্যা করার পর তিনিই প্রথম ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ৩৬ মাস জেলে ছিলেন। সেখানে থেকে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন।

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমাদের পরিবারে রাজাকার কে? আমার বাবা শিক্ষকতা করতেন। কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। শিক্ষকতা করতে গিয়ে হয়তো কারও সাথে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে, তিনি কোনো রাজনীতি করেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার চাচা এরফান মিয়া রাজাকার ছিল। তার সাথে আমাদের পারিবারিক ঝামেলা ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার চাচা একদিন আমার ভাইকে মা’রার জন্যও চেষ্টা করেছে, ৫ মিনিটের ব্যবধানে বড় ভাই মুজিব বাহিনীর প্রধান ঘর থেকে বের হয়ে যান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পেছনের হিন্দু বাড়ি লু’ট করবে, তাদের মে’রে ফেলবে শুনে আমার আব্বা তাদের রক্ষা করেছেন। তিনি আমার চাচার কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন। তাহলে আমরা কীভাবে রাজাকার পরিবার হলাম।

আবদুল কাদের মির্জা সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এত বড় ঔ’দ্ধত্য তার। আমরা জাতির কাছে বিচার চাই। আমি কোনো কথা যদি মিথ্যা বলি, আমার বিচার করুক। আর না হলে সে যেসব অ’ন্যায় করেছে, তার বিচার করতে হবে। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − 3 =