সাংবাদিকদের জন্য “এক কোটি” টাকা করে “ঝুঁকি বীমা” ঘোষণা করা হোক

0
677

মোঃ রাসেল কবির :

সাংবাদিকদের কাজের ঝুঁকি বিবেচনায় সরকার কর্তৃক প্রত্যেক সাংবাদিকের জন্য “এক কোটি” টাকা করে “ঝুঁকি বীমা” ঘোষণা করা হোক। সাংবাদিকরা জাতির দর্পন। সমাজের আয়না। তাদের কলম ও ক্যামেরা জাতিকে পথ দেখায়। তুলে ধরে প্রতিদিন সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনা- দুর্ঘটনা, সমস্যা ও সম্ভাবনার খবর। সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিদিন সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া  সকল খবর মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো। 

মানুষের রুচি আর দৃষ্টিভঙ্গিতে এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে দৈনিক সংবাদপত্র না পড়লে বা রেডিও – টেলিভিশনের সংবাদ না শুনলে যেন দিনটি কেমন নিরশ মাটি মাটি লাগে। মানুষ এখন জানতে চায়, কোথায়–কখন কি ঘটলো, কে ঘটাল, কেন ঘটাল ইত্যাদি ইত্যাদি। এসকল খবরের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলছে সংবাদকর্মী সাংবাদিকরা। এই ছুটে চলা কখনোই মসৃণ নয়। তথ্য সংগ্রহ,  অনুসন্ধান, তথ‍্যের সঠিকতা যাচাই, প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষু রাঙ্গানো নিয়েই সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়। 

উন্নত বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সাংবাদিকতা সব সময় একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। জার্মান ভিত্তিক গণমাধ্যম, “ডয়চে ভেলে” বলেন, “নানা নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। প্রশাসন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাদের মামলা-হামলার ভয় সব সময় থাকে। পাশে থাকে না তার প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিক সংগঠন গুলো।” 

 দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি সংস্থা “দুদক” আছে, তারা সরাসরি  গোয়েন্দাগীরি করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়- সংবাদপত্রে পরিবেশিত সাংবাদিকদের তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতিবাজ আমলা, ব‍্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি ধরতে অভিযান চালায় দুদক। চায় সম্পদের হিসাব। ব্যাংক ব্যালেন্সের তথ্য। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আছে মাসিক বেতন, ভাতা, গাড়ি, বাড়ি, চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা। আর যে সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনুসন্ধান করে এই দুর্নীতিবাজদের  তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ করল এবং সমাজের ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর মানুষগুলোর মুখোশ উম্মোচন করে দিলো তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোনো বরাদ্দ। 

শুধু বরাদ্দ নেই তাই নয়। নেই দেশের সকল সাংবাদিকদের সঠিক কোন তালিকা। তাদের জন‍্য নেই কোনো নীতিমালা।

 সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ধারণা যারা বড় বড় পত্রিকা, রেডিও- টিভি মিডিয়ায় কাজ করে তারাই শুধু সাংবাদিক। তাদেরও তো সঠিক কোন তালিকা তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই বলে আমাদের ধারণা। তবে সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যে, ঝুঁকির মধ্যে থাকে- তাতে কোন সন্দেহ নেই কারোই।

 যেমন, ৫ই ডিসেম্বর২০ কুষ্টিয়া শহরে দুর্বৃত্তরা দীপ্ত টিভির দেবেশ চন্দ্র সরকার ও হারুনকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করলো। ৩১ শে ডিসেম্বর২০ বগুড়ায় গুচ্ছগ্রাম আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণকাজে ঠিকাদারের অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহকালে সময় টিভির মাজেদুর রহমান ও রুবেলকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলল ঠিকাদারের লোকেরা। বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডিবিসি নিউজের রাজবাড়ী প্রতিনিধি দেবাশীষকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা মামলার আসামি করা হলো।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নজিরবিহীন ভাবে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত ৫ই জানুয়ারি “গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে” রাঙামাটিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

 মফস্বল সাংবাদিক  ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আবু জাফর বলেন, বর্তমানে শিশুরা জজ, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও কেউ সাংবাদিক হতে চায়না। গণমাধ্যম, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা নিয়ে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইগুলোতে একটি শব্দ লেখা নেই। এই বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের  দৃষ্টি আকর্ষণ ছাড়া সাংবাদিকদের আর কিইবা করার আছে? 

সাংবাদিকদের প্রাণের দাবী, তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সারাদেশের সাংবাদিকদের একটি তালিকা করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংবাদপত্র ও রেডিও-টিভি মিডিয়ার সাংবাদিক হওয়ার যোগ্যতা উল্লেখ করে একটি “নীতিমালা” প্রণয়ন করা হোক। আর সাংবাদিকদের ঝুঁকি বিবেচনায় এনে তাদের জন্য “এক কোটি” টাকা “ঝুঁকি বীমা” ঘোষণা করা হোক।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 2 =